• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত

প্রকাশিত: জুন ১৪, ২০২৪, ১২:৪৮ এএম

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঘরমুখো মানুষের স্রোত শুরু হয়েছে। কেউ যাচ্ছেন সড়কপথে, কেউ ট্রেনে এবং কেউবা যাচ্ছেন লঞ্চে। সরকারের নানা তৎপরতায় বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই ট্রেনে বাড়ি ফিরছে মানুষ। লঞ্চযাত্রায়ও তেমন ভোগান্তি নেই। তবে সড়কপথে যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বাড়িফেরা মানুষ। পাশাপাশি বাসের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীর অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। 

ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা বুধবার থেকে যাত্রা শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবার ছিল ট্রেনযাত্রার দ্বিতীয় দিন। প্রথম দিন অধিকাংশ ট্রেন বিলম্বে চলাচল করলেও দ্বিতীয় দিন সময় অনুযায়ী চলাচল করেছে। বৃহস্পতিবার বিকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা যায় ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন প্ল্যাটফরম ও স্টেশনে উপচে পড়া ভিড়। বিনা টিকিট রোধে স্টেশনে প্রবেশের ক্ষেত্রে তিন স্তরবিশিষ্ট চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে বিশেষ লাইন। রেলওয়ে-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শতচেষ্টায়ও বিনা টিকিট রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্টার থেকে আসনযুক্ত কোনো টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন কাউন্টার থেকে স্ট্যান্ডিং টিকিট কাটতে দেখা গেছে যাত্রীসাধারণকে। অনলাইনে টিকিট কাটতে ব্যর্থ হওয়ায় কিছু যাত্রী আসনবিহীন টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মধ্যরাত পযর্ন্ত ৪৫টি আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে।

বিলম্বে চলা কিছু ট্রেনের মধ্যে রাজশাহী কমিউটার ট্রেন প্রায় ২ ঘণ্টা দেরিতে কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। এছাড়া চট্টলা এক্সপ্রেস ১টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে ৩টা ১৫ মিনিটে। বনলতা এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, নকশিকাঁথা এক্সপ্রেস ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে। 

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে রেলপথমন্ত্রী কমলাপুর স্টেশন পরিদর্শন শেষে প্ল্যাটফরমে দাঁড়ানো সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় রেলপথমন্ত্রী বলেন, আমরা সফলতার সঙ্গে বুধবার যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছি, যা সম্ভব হয়েছে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নিরাপত্তা বাহিনীদের সহযোগিতায়। আমরা চেষ্টা করছি সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই যাত্রীদের বাড়ি পৌঁছে দিতে। এ সময় রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলীসহ রেলওয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বৃহস্পতিবার সরেজমিন রাজধানীর বহির্গমন মুখগুলো ঘুরে দেখা হয়। গাবতলী ও মহাখালী হয়ে উত্তরা রুটে তেমন কোনো দুর্ভোগ ছিল না। তবে গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও শ্যামপুর হয়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন, তাদের অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনাল ও আশপাশের বাস কাউন্টার এবং ঢাকা-মাওয়া সড়কের যাত্রাবাড়ী মোড়ে বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর প্রচুর চাপ দেখা যায়। তবে বিকাল ৫টার পর থেকে সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে এবং এর আশপাশের বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীদের তেমন একটা চাপ দেখা যায়নি। অফিস ছুটির পর যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীতে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। এতে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট থমকে যায় যাত্রীদের চলাচল। এরপর বৃষ্টিতে ভিজেই বাসটার্মিনাল ও কাউন্টারগুলোয় আসতে দেখা যায়। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর উপচে পড়া ভিড় হয়। কাউন্টারগুলোয় বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়।

চাঁদপুর-কচুয়াগামী নিয়াজ সেমি তার বোন নিশিকে নিয়ে বিকাল পৌনে ৪টায় সায়েদাবাদ বাসটার্মিনালে যান। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমার বিশ্ববিদ্যালয় ও বোনের স্কুল বন্ধ হয়েছে বুধবার। বিকাল ৫টার পর যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাবে। সেজন্য একটু তাড়াতাড়ি রওয়ানা হলাম।

আবুল কালাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বরিশাল যাচ্ছেন যাত্রাবাড়ী মোর বাস কাউন্টার থেকে। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২৫০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে টিকিট কেটেছি। তাকে বিআরটির কাছে অভিযোগ করার কথা বললে তিনি বলেন, এসব সবই বিআরটির লোকজন জানেন। আমি বললে হয়তো লোকদেখানো একটু তদারকি করবে আবার আমি চলে গেলে যেই সেই হবে। বলে সময় নষ্ট না করাই ভালো।

এদিকে পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ সড়কপথে বাড়ি ফিরছেন। আগে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করতে হতো, সেখানে এখন ৬ থেকে ৭ মিনিটেই পদ্মা সেতু দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছেন তারা। এতে তাদের মনে স্বস্তির ভাব দেখা যায়। 

বরিশালগামী বাসের যাত্রী মনির হোসেন বলেন, বর্তমান সরকার দ্রব্যমূল্যে আমাদের কষ্ট দিলেও পদ্মা সেতু করে বাড়িতে দ্রুত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এজন্য সরকারের প্রতি আমি অত্যন্ত খুশি। কেননা আগে আমাদের চলাচলের একমাত্র পথ ছিল লঞ্চ। সেখানে নানা অব্যবস্থায় অনেক দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে। 

আর্কাইভ