• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১
সাংবাদিকের অর্থমন্ত্রী

আমি খুবই দুঃখিত একটু ম্যাচিউর প্রশ্ন আশা করেছিলাম

প্রকাশিত: জুন ৮, ২০২৪, ১২:৫৫ এএম

আমি খুবই দুঃখিত একটু ম্যাচিউর প্রশ্ন আশা করেছিলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকের প্রশ্নে খুবই দুঃখিত ও নিরাশ হয়েছেন  অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সংবাদ সম্মেলনে যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার বেশিরভাগই খুবই ইমম্যাচিউর (অপরিপক্ক) উল্লেখ করে তিনি সাংবাদিকদের পড়ালেখা করে আসার পরামর্শ দিয়েছেন।

শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ অর্থবছেরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, পরীকল্পনা মন্ত্রী আব্দুস সালাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী র. আ. ম. উবাদুল মোক্তাদির, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর আবদুর রউফ তালুকদার-কে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন অর্থমন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বেসরকারি একটি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন- অর্থনীতির আকার ছোট হয়ে আসছে। এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি একটু ম্যাচিউর প্রশ্ন আশা করেছিলাম ....টেলিভিশনের কাছ থেকে। আমি খুবই নিরাশ হয়েছি।

এ পর্যায়ে বেসরকারি টেলিভিশনটির ওই সাংবাদিক কিছু বলতে গেলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আরে বাবা আমি আপনার উত্তর দিচ্ছি। আমাকে আটকাচ্ছেন কেন, আপনাকে তো আমি আটকাইনি। আপনাকে তো ইচ্ছামতো বলতে দিয়েছি। এখন আমারটা তো শুনতে হবে আপনাকে।

‘আপনি অতি সরলীকরণ জিনিসটা খুবই রপ্ত করে ফেলেছেন। এগুলো তো একেবারে অভার সিম্প্লিফিকেশন (অতি সরলীকরণ)। এইভাবে ইকোনমি চলে নাকি। হ্যাঁ, আমরা সব ছোট হয়ে গেলাম, আমাদের সব শেষ। কোথায়? আরও একটু পড়েটড়ে আসবেন। এইভাবে অতি সরলীকরণ করবেন না একটু ম্যাচিউরিটি নিয়ে আসেন, প্রশ্ন যখন করেন’, বলেন অর্থমন্ত্রী।

আর এক টেলিভিশনের রিপোর্টার প্রশ্ন করেন, বাজেট বক্তব্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দৃঢ় কোনো বার্তা দেখিনি। আর্থিক খাতের দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আজকে আপনি কি বলবেন? কেন বার্তা দিচ্ছেন না, আপনার ওপর কি কোনো চাপ আছে? এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তো বলছি খোলাখুলি। বিফোর দ্যা ওয়ার্ড, বিফোর আওয়ার অডিয়েন্স, বিফোর আওয়ার পিপল। আমরা তো কোনো রাকঢাক করিনি। তো আপনি খালি ঘুরে ফিরে ওই একই কথায় যাচ্ছেন কেন? এটা তো বুঝতে পারলাম না। এটা কি ধরনের প্রশ্ন?

‘কিভাবে প্রশ্ন করে এগুলো তো শিখতে হবে আপনাদেরকে, অত্যান্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে। কারণ এটা কোন জার্নালিজম না। খালি এক কথায় ঘুরে ফিরে বলেন এবং অতি সরলীকরণ। এভাবে চলে নাকি? সমাজ, সংসার এভাবে চলে? কোথাও চলে না। এগুলো (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে নিয়ে) দেখেন, দেখে একটু শিখেন। তাহলে আমাদেরও কাজ করতে সুবিধা হবে’ বলেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

এরপর একটি ইংরেজি দৈনিকের একজন রিপোর্টার প্রশ্ন করেন, মাননীয় অর্থমন্ত্রী আপনি জানেন বেসরকারি খাত আমাদের কর্মসংস্থানের সব থেকে বড় খাত। এই বাজেটে বেসরকারি খাতে যদি কেউ ইকোনমিক জোন বিনিয়োগ করে তার ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, কাঁচামাল এবং যে মাল কিনে তার ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভলপ তার ওপর শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। একইভাবে যদি কেউ জোনের বাহিরে গিয়ে বিনিয়োগ করলে গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হবে না। তাহলে ব্যবসায়ীরা এখন যাবে কোথায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন- তরা পানিতে পড়লে কুমিরে খাবে, আর ডাঙ্গায় পড়লে বাঘে খাবে অবস্থা।

এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী ওই রিপোর্টারকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ব্যবসায়ীদের যে সংগঠন তারা কিন্তু এমন কোনো কথা বলেনি। দয়া করে এফবিসিসিআই এবং ঢাকা চেম্বারের বক্তব্য পড়ে আসবেন।

আর এক বেসরকারি টেলিভিশনের রিপোর্টার প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন- আপনি স্বজ্জন ব্যক্তি, তাহলে বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়াতে কেন গোজামিল দিলেন? আর একটি বিষয় হলো আপনি বলছেন- আমাদের রিজার্ভ এই অর্থবছর শেষে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে, যেটা এখন প্রায় ২০ বিলিয় ডলারের কাছাকাছি। আপনি রিজার্ভ বাড়াবেন কিভাবে? আপনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নকে টাকা না ছাপিয়ে ডলার ছাপানোর দায়িত্ব দিয়েছেন কিনা? এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা একেবারেই নন-সিরিয়াস প্রশ্ন। ঠিক আছে। এ প্রশ্ন উত্তর দেয়ার যোগ্য নয়।

একটি বাংলা দৈনিকের এক রিপোর্টার প্রশ্ন করেন- পণ্যের দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়, কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের অভাবে কাঙ্খিতভাবে প্রতিফল ঘটেনা। আমি প্রশ্ন করবো- বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হবে কি না? এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই মিলে কাজ করার চেষ্টা করছি এবং সাংবাদিকরাও তো আমাদের সাহায্য করছে। এটা কি ধরনের প্রশ্ন করলেন, সমন্বয় করা হবে কি না। অবশ্যই করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সব শেষ প্রশ্ন করেন আর একটি বেসরকারি টেলিভিশনের রপোর্টার। তিনি প্রশ্ন করেন প্রস্তাবিত বাজেটে এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আইনে এখনো আছে। আইন কবে, কখন সংশোধন করবেন? এর উত্তরে অর্থমন্ত্রী প্রথমে বলেন, কবে, কখন করবেন এটা কেউ বলে নাকি। আপনি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন কবে করবেন এটা, এ রকম হয় না। আইনটা সংশোধন করতে হবে। হ্যা বলেছি তো করার জন্য।

এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, একটা জিনিস বলতেই হবে লাস্টের প্রশ্নটা ভালো প্রশ্ন ছিলো। সিরিয়াস প্রশ্ন। কিন্তু আমি দেখলাম বেশিরভাগই হলো খুবই ইমম্যাচিউর। পড়েন নাই, এই যে বইটা (বাজেট বক্তব্যের বই হাতে ধরে) দিয়েছি আমরা, বইটা পড়েন।

তিনি বলেন, আমি খুবই দুঃখিত হয়েছি। আপনাদের লেভেল অব ম্যাটিউরিটি দেখে। খুবই নিরাশ। তো যাক দুই-একজন ভালো প্রশ্ন করেছেন। তবু আমি সবাইকে ধন্যবাদ দেবো। আপনারা অনেক ইন্টারেস্ট শো করেছেন, কিন্তু ইন্টারেস্টটা ম্যাচিউর হওয়া দরকার। লেখাপড়াটা একটু করতে হবে। এটা দয়া করে করবেন।

আর্কাইভ