প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম
‘কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ না থাকে’- ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার মিশন সম্পন্ন করতে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে এ তথ্য দিয়েছে।
জানা গেছে, বন্ধু আক্তারুজ্জামান শাহীনের ব্যবসায়িক ক্ষোভ ও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল ভূঁইয়া শিহাবের সঙ্গে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই কাল হয়েছে এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের। পুরোনো হিসেব মেটাতে আক্তারুজ্জামান শাহীন ও শিমুল ভুইয়া একাট্টা হন। কিন্তু বিষয়টি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। তাকে কৌশলে বাংলাদেশ থেকে ডেকে নিয়ে কলকাতায় বাস্তবায়ন করা হয় হত্যার মিশন।
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামিরা জানিয়েছে- হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ভুক্তভোগী এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সোনার ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্ক রয়েছে। লেনদেনসহ আরও কিছু স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আনোয়ারুল আজিম আনারের ওপর আক্তারুজ্জামান শাহীনের ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এ বিষয়টি বুঝতে পারেননি আনোয়ারুল আজিম আনার।
এছাড়াও পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল ভূঁইয়া শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ সাইদেরও সঙ্গেও এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছিল। ফলে আক্তারুজ্জামান শাহীন ও শিমুল ভূঁইয়া পরিকল্পিতভাবে আনোয়ারুল আজিম আনারকে দেশের বাইরে ভারতের কলকাতায় নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারা রাজধানীর গুলশান-২ ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় দুটি ফ্ল্যাটে এ বিষয়ে একাধিকবার বৈঠকও করেন। হত্যাকাণ্ড থেকে লাশ গুমের পুরো মিশনটি যেন কেউ বুঝতে না পারে সেজন্য ‘কাট আউট’ পদ্ধতি অবলম্বন করেন তারা।
হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড পলাতক আক্তারুজ্জামান শাহীন গ্রেফতার আসামিদের নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কলকাতার নিউটাউন এলাকায় যান এবং সেখানে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। হত্যাকাণ্ডের অংশ নেওয়ারা সেখানে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে কলকাতা থাকা অবস্থায় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের সঙ্গে শাহীন ব্যবসায়িক বৈঠক করার কথা বলে ভারতের কলকাতায় যেতে বলে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে শাহীন গত ১০ মে বাংলাদেশে চলে আসেন, যা ভুক্তভোগী এমপি আনার জানতেন না। বাংলাদেশে আসার সময় শাহীন হত্যার মিশন সম্পন্ন করার জন্য আমানুল্লাহ সাইদকে দায়িত্ব দিয়ে আসেন। তাকে বলেন, কোনোভাবেই যেন কাজটা মিস না হয় এবং কোনো প্রমাণ না থাকে।
গত ১২ মে এমপি আনার ভারতের কলকাতায় যান এবং তার এক বন্ধুর বাসায় উঠেন। পরদিন অর্থাৎ ১৩ মে সকালের দিকে এমপি আনার ব্যবসায়িক বৈঠক করার জন্য শাহীনের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতার নিউটাউন এলাকায় শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিনই (১৩ মে) শিমুল ভূঁইয়া শিহাব ওরফে আমানুল্লাহ সাইদ, তানভীর, সেলেস্তি রহমানসহ অন্যান্যদের সহযোগিতায় এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশের মাংস ও হাড় আলাদা করে গুম করে ফেলা হয়, যেন কোনো প্রমাণ না থাকে। এরপর তারা বাংলাদেশে চলে আসেন।