• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
সংসদে প্রতিমন্ত্রী পলক

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধ প্রবণতা ও ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৪, ০১:২৬ এএম

ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতির সঙ্গে সাইবার জগতে অপরাধ প্রবণতা ও ঝুঁকি বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ডিজিটাল বাংলাদেশের যত অগ্রগতি হচ্ছে, সাইবার জগতে অপরাধ প্রবণতা ও ঝুঁকি ততই বাড়ছে। এজন্য ঝুঁকি মোকাবিলায় আইন প্রণয়নসহ তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আবুল কালাম আজাদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় সংসদে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এসব কথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ২০০৮ সালের আগে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন শুরুর আগে অনলাইনে আর্থিক লেনদেন অথবা সরকারি সেবার তেমন কোনো কার্যক্রম ছিল না। তাই সাইবার ঝুঁকিও কম ছিল। যত দ্রুত আমরা ডিজিটাইজেশন করেছি, তত বেশি তথ্য ও উপাত্তের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে। ফলে আমরা ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সংসদে পাস করেছিলাম। এরপর প্রয়োজনের তাগিদে নতুন আইন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনের আলোকে আমরা চারটি মূল স্তম্ভ নিয়ে কাজ করছি। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি কাউন্সিল রয়েছে। সেখান থেকে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং অন্যান্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। দ্বিতীয়ত, ফরেন্সিক ল্যাবেও কাজ হচ্ছে। কোনো অপরাধ যদি সংগঠিত হয় তাহলে সেই অপরাধকে ও অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করা এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ যাচাই-বাছাই করার জন্য সেই ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব কাজ করছে।

টেলিটকের সেবা বাড়াতে তিন হাজার টাওয়ার নির্মাণ হচ্ছে: এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের সরকারি মোবাইল সিম কোম্পানি টেলিটক সিমের নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে তিন হাজার বিটিএস সাইট (টাওয়ার) নিমার্ণের কাজ চলমান রয়েছে। 

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেবার মান বাড়াতে টেলিযোগাযোগ বিভাগ সারাদেশে সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ শীর্ষক চলমান প্রকল্পের অধীন তিন হাজার নতুন বিটিএস সাইট (টাওয়ার) স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের অর্থায়নে দেশের দুর্গম পার্বত্য জেলা চট্টগ্রাম, হাওর, উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চল এলাকায় ৪২০ নতুন বিটিএস সাইট (টাওয়ার) স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রস্তাবিত ‘ইউনিয়ন পর্যন্ত টেলিটকের ৪জি মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার বিটিএস সাইট স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হলে টেলিটকের মোট বিটিএস সাইট (টাওয়ার) সংখ্যা ১১ হাজারে উন্নীত হবে। ফলে, সারাদেশে টেলিটকের মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবার উন্নতি হবে এবং ৪জি নেটওয়ার্ক সেবা প্রদান সক্ষমতা অর্জিত হবে।

মন্ত্রী-এমপিদের ফেসবুক পেজ-ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার পরামর্শ: মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে ফেক আইডি দিয়ে অপপ্রচার বন্ধে মন্ত্রী ও এমপিদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার পরামর্শ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েডের জন্য পাঠালে আমরা ফেরিফাই করে দেবো। ফলে ফেক আইডি দিয়ে আপনার নামে কেউ অপপ্রচার করতে পারবে না।

এর আগে সাইফুল ইসলাম সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ফেক ফেসবুক আইডি খুলে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে। ইউটিউব চ্যানেল খুলে মানুষের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। এটা বন্ধে মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান তিনি।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ সমস্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা পৃথিবীর সমস্যা। যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, নতুন মাধ্যমে ভুল তথ্য, ফিশিং, মাসকিংসহ এ ধরনের অপরাধ করা হচ্ছে। অপপ্রচার, গুজব ছড়িয়ে অনেকের প্রাণহানি হচ্ছে, অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেচে নিচ্ছে। সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদদের নামে অপপ্রচার হয়। ছাত্রী, বোন, কন্যাদের অনেক ডিপফেক ভিডিও বানিয়ে অথবা ইমজে ফটোশপ করে অপপ্রচার, মানহানিকর কনটেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে অনেক ছাত্র-ছাত্রী, কিশোরীর জীবন দিতে হচ্ছে। এজন্য সময়ের প্রয়োজনে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছি। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যেন আইনের আশ্রয় নিতে পারে।

মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েডের জন্য পাঠান, তাহলে আমরা ফেরিফাই করে দেবো। ফলে ফেক আইডি দিয়ে আপনার নামে কেউ অপপ্রচার করতে পারবে না। পাশাপাশি ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ অন্য সংস্থাগুলো নিয়মিত (অভিযোগ) পাঠাই। এই প্লাটফর্মটা মাল্টিন্যাশনাল, তাদের অফিস বাংলাদেশে রেজিস্ট্রেশন নেই। এজন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করছি। যাতে বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুমতি না নিয়ে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে না পারে এবং অপব্যবহার করতে না পারে। অভিযোগ করলে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত ৫০২৯ এজেন্টশিপ বাতিল: এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ বলেন, অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগে ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের তথ্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে হুন্ডি লেনদেনে জড়িত সন্দেহে ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ হুন্ডি গেমিং, বেটিং সংক্রান্ত এক হাজার ৯৬টি ওয়েবসাইট, ১৮২টি অ্যাপ ও এক হাজার ২ ফেসবুক ফেজের তথ্য বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) ও ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে লেনদেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রযুক্তিগত এই উন্নয়নের সুবিধা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু চক্র অনলাইন জুয়া/বেটিং, গেমিং, ফরেক্স/ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও হুন্ডি মত অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। ফলে একদিকে যেমন দেশ হতে মুদ্রা পাচার বেড়ে যাচ্ছে, অপরদিকে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে এবং ফলশ্রুতিতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মন্ত্রী বলেন, অনলাইন জুয়া/বেটিং এবং হুন্ডির সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে এ পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৫৮৬টি ব্যক্তিগত এমএফএস হিসাব বিএফআইইউ কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অভিযোগে ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্ট এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের তথ্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। তারমধ্যে হুন্ডি লেনদেনে জড়িত সন্দেহে ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ১০ হাজার ৬৬৬টি এমএফএস এজেন্ট হিসেবের লেনদেন ব¬ক করা হয়। হুন্ডির সঙ্গে সংশি¬ষ্টতা সন্দেহে ২১টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠান ও এদের স্বার্থসংশ্লিস্ট ৩৯টি হিসেবের তথ্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ