প্রকাশিত: মে ৪, ২০২৪, ১১:১১ পিএম
‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার একজন ভয়ংকর ‘সাইকোপ্যাথ’। নিজের বাবাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া হয়ে ঢাকা শহরে এসে সে সাইকোপ্যাথে পরিণত হয়। (সাইকোপ্যাথি হলো এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। এটি একটি পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার)। ফলে ভয়ংকর সব অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে সে। তার অপকর্মের অভিযোগগুলো সম্পর্কে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তার স্ত্রী মিতু হালদার ও নিয়োগ দেওয়া চিকিৎসককে ডিবিতে ডাকা হয়েছে। রোববার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। মিল্টনকে অর্থ সহায়তাকারীদের তালিকা করে তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পর্যায়ক্রমে মিল্টনের অপকর্মের সব সহযোগীকেই জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনের আওতায় আনা হবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা কিভাবে হলেন তিনি, তার অর্থের উৎসটা কোথা থেকে আসে, কিভাবে তিনি দরিদ্র মানুষদের সংগ্রহ করতেন, এসব মানুষকে টর্চার সেলে এনে কেন পেটাতেন-সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রাতের বেলায় কেন মৃতদের জানাজা করতেন, মৃত্যু সনদে কেন নিজেই সিল-ছাপ্পর মারতেন এসব বিষয়েও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে মিল্টন কীভাবে অর্থ উপার্জন করতেন, এর প্রক্রিয়া কি এবং কারা তাকে সহায়তা করতেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ভিডিওগুলো যারা বানিয়ে দিত তাদেরও শনাক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি যে ডাক্তারকে সেখানে নিয়েছিলের তার সঙ্গে আমরা কথা বলব। অপারেশন থিয়েটারে কি করা হতো সব জিজ্ঞাসা করা হবে।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানান, মিল্টনের স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার ডিবিতে ডাকা হয়েছে।
মিল্টন সমাদ্দারের তিন-চারটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, সেসব অ্যাকাউন্টে কারা টাকা পাঠাতেন, সেই টাকা তুলে তিনি কি করতেন আমরা তদন্ত করে জানব।
বুধবার (১ মে) রাতে রাজধানীর মিরপুরে অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা-মিরপুর বিভাগের একটি টিম। পরে রাতে তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। সেসব মামলায় মিল্টনকে ৩ দিনের রিমান্ড দেন আদালত।
রহস্যময় মিল্টন সমাদ্দারের ভয়ংকর সব অপকর্মের বিষয়ে তদন্ত করছে ডিবি মিরপুর বিভাগের একাধিক টিম। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তাকে। তবে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন মিল্টন। তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেছেন। শনিবার রিমান্ডের তৃতীয় দিনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথাও জানিয়েছেন ডিবির তদন্তসংশ্লিষ্টরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মিল্টনের আশ্রমে কোনো নিবন্ধিত ডাক্তার নেই। তিনি নিজে ডাক্তার সেজেছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক কিশোর বালাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতারণামূলকভাবে আশ্রিতদের বিভিন্ন চিকিৎসা করেন, সেবা দেন, পাশাপাশি এ নিয়ে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে প্রচার করতেন। এসব ভিডিও ১ কোটি ২০ লাখ ফ্রেন্ড-ফলোয়ারের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে টাকা উপার্জন করতেন মিল্টন।