প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ১০:০৬ পিএম
রাজধানীর ১০টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, রাজধানীর ৫০টি থানার মধ্যে ১০টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যের অপরাধ লক্ষ করা যায়। এসবের মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জিএম তসলিম, সাংবাদিক জিয়া খান, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও সাংবাদিক কাওসার সোহেলী।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের কিশোর আগামী দিনের যুবক। তারাই আগামী দিনের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সি কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সি কিশোরেরা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি ‘কিশোর গ্যাং’।
তিনি বলেন, আজকের কিশোর-তরুণেরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। এ জন্য তাদের নিয়ে ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দ বলতে চাই না। খেলাধুলার জায়গার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।
কিশোর গ্যাংয়ের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা যারা রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অদ্ভুত অদ্ভুত নাম রয়েছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা মদদদাতা গডফাদার তারা ওইভাবে গডফাদার নয়। তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছে, বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলরদের কিছু অনুসারী রয়েছেন, যাদের ১৮ বছরের বেশি। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছেন। সরাসরি কোনো কাউন্সিল কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি আমরা। কাউন্সিলরদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন, যারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরের বেশিরভাগই ছিন্নমূল, যারা রাস্তায় কাজ করে। বেশিরভাগ কিশোরের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। রাজনৈতিক উপনেতা-পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময়ে থানায় ডেকে শাসানোও হচ্ছে।
তিনি বলেন, কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে সবার আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। অভিভাবকরা যেন তাদের কোমলমতি সন্তানদের সময় দেন ও ঠিকমতো দেখাশোনা করেন। যাতে তারা কিশোর গ্যাংয়ের মতো অপরাধে জড়িয়ে না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, কিশোর অপরাধের ক্ষেত্রে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক দুটি কাজই কিন্তু পুলিশ করে থাকে। কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পুলিশ মামলা রুজু, অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও তাদের আদালতে প্রেরণ করে থাকে। এছাড়াও কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করতে পুলিশ বিভিন্ন স্কুলে, পাড়ায়, অনুষ্ঠানে এমনকি মসজিদে গিয়েও মানুষকে সচেতন করছে।