প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২৪, ০১:৩৭ এএম
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও পরক্ষণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবার প্রথম একুশের বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মো. সাহাবুদ্দিন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফুল দেওয়ার পর দলীয় নেতাদের নিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তারা ফুল দেয়ার পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু ফুল দেন শহীদ বেদীতে। এরপর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ বিচারপতিরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টারা।
এরপর তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান শহীদ বেদীতে ফুল দেন।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বাঙালি জাতির জন্য এই দিবসটি হচ্ছে শোক ও বেদনার। অনদিকে মায়ের ভাষা বাংলার অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। যে কোন জাতির জন্য সবচেয়ে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার হচ্ছে মৃত্যুর উত্তরাধিকার-মরতে জানা ও মরতে পারার উত্তরাধিকার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদরা জাতিকে সে মহৎ ও দুর্লভ উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন।
১৯৫২ সালের এদিনে ‘বাংলাকে’ রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাংলার (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) ছাত্র ও যুবসমাজসহ সবস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসক গোষ্ঠির চোখ-রাঙানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে সালাম, জব্বার, শফিক, বরকত ও রফিক গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সঠিক নিয়মে, সঠিক রং ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে জাতীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মিশনগুলো শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা, পুস্তক ও চিত্র প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করবে; যেখানে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বাঙালি অভিবাসীদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।
এছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপলক্ষে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কদ্বীপ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। একুশের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার এবং ভাষা শহীদদের সঠিক নাম উচ্চারণ, শহীদ দিবসের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা, শহীদ মিনারের মর্যাদা সমুন্নত রাখা, সুশৃঙ্খলভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, ইত্যাদি জনসচেতনতামূলক বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি গণমাধ্যমে প্রয়োজনীয় প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংবাদপত্রগুলোতে ক্রোড়পত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের বিষয়টি বিশেষভাবে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।