প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৪, ০৮:৪৪ পিএম
রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে গুমের শিকার সব মানুষকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মায়ের ডাক’-এর উদ্যোগে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া মুহাম্মদ রহমত উল্লাহকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি’তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান তারা।
সংগঠনের সভাপতি সানজিদা ইসলামের সভাপতিত্বে এতে আরও বক্তৃতা করেন প্রফেসর ডাক্তার মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব, গুম হওয়া মো. রহমত উল্লাহর বোন রাজিয়া আক্তার ও বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে গুম হওয়া ব্যক্তির স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে গুম হওয়া মো. রহমত উল্লাহর মা মমতাজ বেগমের পক্ষে বোন রাজিয়া আক্তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত আনুমানিক ১২টায় র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাক পরিহিত একটি দল ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে আমার বাড়িতে আসে। এ সময় আমি, বড় ছেলের স্ত্রী ও ছোট ছেলে রহমত উল্লাহ বাড়িতে ছিল। রহমত উল্লাহহর শরীরে জ্বর থাকায় সে আমার পাশেই শুয়ে ছিল।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাড়ির মূল ফটকে কড়া নাড়ে। আমি ঘরের দরজা ও মূল ফটক খুললে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন সদস্য ঘরে আসে। তারা রহমত উল্লাহকে (২০) জোর করে ধরে নিয়ে যায়। কারণ জানতে চাইলে তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানায়। রহমত উল্লাহকে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও বাইরে যাই। র্যাবের একটি গাড়ি ও হায়েস মাইক্রোবাস দেখতে পাই।
এরপর তারা রহমত উল্লাহকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে চলে যায়। পরদিন সকালে আমি আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রহমত উল্লাহর খোঁজে মানিকগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গেলে তারা ধামরাই থানায় খোঁজ নিতে বলে। ধামরাই থানায় গেলে পুলিশ কোনো তথ্য দেয়নি।
এরপর নবীনগর র্যাব ক্যাম্প ও সাভার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। ধামরাই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে প্রথমে পুলিশ জিডি না নিলেও পরে রহমত উল্লাহর গুমের বিষয়টি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ৭ অক্টোবর জিডি নেয়।
তিনি আরও বলেন, ৫ মাস পরও আমার ছেলের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা র্যাব, ডিবি অফিস ও কারাগারে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু ছেলের কোনো হদিস পাইনি। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের জানামতে সে কোনো প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিল না। রহমত উল্লাহ পেশায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। সে যদি কোনো প্রকার অপরাধ করে থাকে, তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হোক। কিন্তু তাকে গুম করবে কেন? আমি আমার ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। তিনি বলেন, যারা আমার ছেলেকে গুম করার সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচার দাবি করছি। আমরা আশাবাদী যে, আপনাদের সবার প্রচেষ্টা এবং সহযোগিতায় আমার ছেলেকে ফিরে পাব।
সংগঠনের সভাপতি সানজিদা ইসলাম বলেন, আমরা চাই প্রতিটি গুম হওয়া লোকজন তাদের পরিবারের কাছে ফিরে আসুক। এই সরকার শুধু বিরোধী দলের লোকজনকে গুম করেছে। সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। গুম হওয়া লোকদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। আপনারা যতই প্রহসনের নির্বাচন করেন না কেন, একদিন সব গুমের বিচার বাংলাদেশে হবে।