• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

মানি লন্ডারিং মামলা: ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম

মানি লন্ডারিং মামলা: ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান আদালতে এ অভিযোগপত্র জমা দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) মো. আমিনুল ইসলাম।

এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেয় দুদক।

দুদক সূত্র জানায়, ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম এবং এসএম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের প্রতিনিধি মাইনুল ইসলাম এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসানের নাম রয়েছে।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাকি ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৩ জন জামিন নেননি। জামিনে আছেন কেবল পারভীন মাহমুদ। ড. ইউনূসসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছে দুদক।

দুদকের সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় আজ বৃহস্পতিবার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। আজই নথিপত্র আদালতের কাছে উপস্থাপন করা হবে।

দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে মামলাটি করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

এর আগে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ–সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছিল। দুদক দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে মামলা করে। সেই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার অনুমোদন পাওয়া গেছে।

দুদক আরও জানায়, গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ গ্রামীণ টেলিকমের বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে সিদ্ধান্ত হয় ব্যাংক হিসাব খোলার। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয় বলে জানানো হয়।

দুদক বলছে, গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনার লভ্যাংশ বিতরণের জন্য শ্রমিক ইউনিয়ন এবং গ্রামীণ টেলিকমের সঙ্গে একই বছরের ২৭ এপ্রিল একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ওই চুক্তিতে ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে বলে দেখানো হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। কাগজপত্র নকল করে এটা করা হয়।

দুদক সচিব বলেন, চুক্তি অনুযায়ী এবং ১০৮তম বোর্ড সভার (গ্রামীণ টেলিকম) সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। তিনি আরও বলেন, কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ না করে তাদের না জানিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়।

অবশ্য ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন সোমবার বলেন, কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়। সেই সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন। সেটিই দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। পরে দুইপক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়। সেটি সম্মতির ভিত্তিতেই হয়েছে।

লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন। তারা হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়।

ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলছেন, সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীরা ২০২২ সালে মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। পরে পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ ধরে দুদক মামলা করে।

ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকারের নির্দেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর দুদকে চিঠি দিয়েছে। যেটা তারা পারে না। আর ড. ইউনূস যখন এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন, তখন তড়িঘড়ি করে দুদক তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে। এর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় ড. ইউনূসসহ চারজনকে ১ জানুয়ারি ছয় মাস করে কারাদণ্ড দিয়েছেন শ্রম আদালত। সেই সাজার রায় চ্যালেঞ্জ করে ড. ইউনূসসহ চারজনের করা আপিল ২৮ জানুয়ারি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল। তারা স্থায়ী জামিন পেয়েছেন।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ