• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

গরিবের গরম কাপড়েও ডলার সংকটের ধাক্কা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৪, ০১:৫৪ পিএম

গরিবের গরম কাপড়েও ডলার সংকটের ধাক্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

গরিবের গরম কাপড়েও ডলার সংকটের ধাক্কা লেগেছে। এলসি জটিলতায় কমেছে আমদানি। ডলারের দাম বাড়ায় গাঁইটপ্রতি পুরোনো কাপড়ের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। ফলে গত বছর খুচরা পর্যায়ে যে জ্যাকেট ১৫০-২০০ টাকায় বিক্রি হতো, তা কিনতে এবার ক্রেতাকে ৩০০-৪০০ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে আমদানি করা শীতের পুরোনো কাপড় কিনতেও নিম্নবিত্তের কষ্ট বেড়েছে।

এদিকে দেশজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। দিনভর গুমট আবহাওয়ায় সূর্যের দেখা মেলা ভাড়। এর প্রভাব রাজধানীতেও পড়েছে। জেঁকে বসেছে শীত। ফলে কদর বেড়েছে গরম কাপড়ের। তাই অনেকের গন্তব্য রাজধানীর ফুটপাতের দোকান। তবে দাম বাড়ায় সাধ ও সাধ্যের সঙ্গে তাল মেলাতে না পারা মানুষ এসব দোকান থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন হাজার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের পুরোনো কাপড় আমদানি করেন। ডলার সংকটের কারণে সরকার একজন ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকার বেশি কাপড় আমদানি করতে দিচ্ছে না। গত বছরও একজন ব্যবসায়ী ৫-৬ টন কাপড় আমদানি করতে পারতেন। এ বছর সর্বোচ্চ ৩ টন আমদানি করতে পারছেন। এছাড়া ডলার সংকট ও এলসি জটিলতায় আমদানিও অনেক কমেছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ায় আমদানিতে খরচ বেড়েছে। সব মিলে গরিবের শীতের কাপড়ের দাম বেড়েছে অনেক। রাজধানীর সদরঘাট লালকুঠি ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পুরোনো কাপড় আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন দেশে কাপড় ধোলাই খরচ বেশি হওয়ায় অনেকে এক মৌসুম পর শীতের কাপড় রেখে দেয়। সেসব কাপড় ব্যবসায়ী নিলামের মাধ্যমে দেশে কিনে আনেন। পিস নয়, এসব কাপড় আমদানি হয় গাঁইট হিসাবে। প্রতি গাঁইট ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। আমদানি পর্যায়ে প্রতি গাঁইট সোয়েটারের দাম পড়ে ৬ থেকে ৯ হাজার টাকা। প্রতি গাঁইট জ্যাকেটের দাম পড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি গাঁইট গরম কাপড়ের টি-শার্টের দাম ৬-৭ হাজার টাকা।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আমীর মার্কেটের মেসার্স ফোরকান অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফোরকান উদ্দীন বলেন, ডলার সংকটের কারণে প্রায় ১৫০ শতাংশ মার্জিন দিয়েও এলসির নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। ৫টি এলসি খুলতে চাইলে ২টি পাওয়া যাচ্ছে। এলসি কম হওয়ায় কাপড় কম আনতে পারছি। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার কারণে কাপড়ের দামও বেড়েছে। রাজধানীর সদরঘাটের বিআইডব্লিউটিএ ভবনের সামনে ফলের আড়ত ও শ্যামবাজারের প্রবেশমুখের মাঝখানেই দেখা মেলে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা শীত পোশাকের দোকান। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোয় পাইকারি ও খুচরা বেচাকেনা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে খুচরা বিক্রেতারা ভিড় করছেন। বিশেষ করে বঙ্গবাজার, গাউছিয়া, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি পোশাক নেন। এছাড়া ঢাকার অলিগলিতে ভ্যানে বিক্রির জন্যও শীতের পোশাক নিয়ে যাচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে মূলত চীন, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আসা শীতের পোশাক বিক্রি হয়। কোনো দেশি পোশাক নেই। এসব পোশাক ব্যবহৃত। বিশেষ করে জ্যাকেট, কটি, বেবি স্যুট, ভেলবেট জ্যাকেট, ট্রাউজার, পাজামা, বয়েজ জ্যাকেট, লেডিস জ্যাকেট, ফুলহাতা টি-শার্ট এখানে পাওয়া যায়। এসব পোশাকের মধ্যে কিছু আছে নতুন, কিছু ত্রুটিযুক্ত। শীতের পোশাক ছাড়াও শীত নিবারণের বিদেশি কম্বল, লেপ, কাঁথা, কমফোর্টার বিক্রি হয় এখানে। বিদেশ থেকে এসব পোশাক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে আসে। সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। মানভেদে এখানে জ্যাকেটের দাম ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেবি স্যুট ১০০ থেকে ৭০০, ট্রাউজার ১০০ থেকে ৩০০, কটি ২৫০ থেকে ৬০০, ফুলহাতা টিশার্ট ৫০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া একটি কোরিয়ান কম্বল দুই হাজার থেকে চার হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁথা ৬০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, কমফোর্টার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

এখানে শীতের পোশাক কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম বলেন, শপিংমল থেকে একটি গরম পোশাক কেনার সামর্থ্য আমার নেই। তাই এখান থেকে গরম কাপড় কিনতে এসেছি। গত বছরের তুলনায় এবার একটি জ্যাকেট ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে।

মার্কেটের ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, এখানে পাইকারি ক্রেতা বেশি। খুচরাও বিক্রি হয়। দেশি কোনো কাপড় নেই। সব কাপড় বিদেশি। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ আমাদের এখান থেকে শীতের পোশাক কেনেন। এবার ডলার সংকটের কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ