প্রকাশিত: জানুয়ারি ৮, ২০২৪, ০৬:২২ পিএম
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সার্বিকভাবে দেশের নির্বাচন ভালো হয়নি। আমরা এটি আশঙ্কা করেছিলাম। সরকার যেখানে চেয়েছে নির্বাচন নিরপেক্ষ করেছে, আবার যেখানে চেয়েছে তাদের প্রার্থীকে জিতিয়েছে। তাই এ কারণে নির্বাচনে কেউ আসতেও চায়নি। আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তা আমি বলতে পারছি না। তবে আমার মূল্যায়নে সরকারের নিয়ন্ত্রিত এ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার কথা না।
সোমবার দুপুরে রংপুর নগরীর সেনপাড়ায় স্কাইভিউ বাসভবনে নির্বাচনপরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, একটা পক্ষ বিভিন্নভাবে জাতীয় পার্টির রাজনীতিকে নষ্ট করার জন্য চেষ্টা করছে। সেখানে সরকারও মদদ দিচ্ছে বলে আমি ধারণা করছি।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করছি না। ফলাফল প্রত্যাখ্যান করার মতো কোনো কারণ আমাদের সামনে নেই। তাহলে কিভাবে প্রত্যাখ্যান করব? তারপরও দলের এমপিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন পর্যন্ত আমরা সংসদে যাব না- এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। তারপরও জাতীয় পার্টি অংশ নিয়েছে, এটি সিদ্ধান্তহীনতা কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, এটি সিদ্ধান্তহীনতা নয়, বরং এটি সঠিক সিদ্ধান্ত। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের মতামতে আমাকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দলের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। নির্বাচন বর্জন করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। দলকে রক্ষা করাসহ এ ঘোলাটে পরিস্থিতিতে দলের ভালোর জন্য আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, রংপুরের সব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের যথেষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ ছিল। আমাদের অনেকে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন। কিন্তু তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলাফল বা সত্যিকারের ফলাফলের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়নি। লোকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি। যারা ভোট দিতে এসেছেন তাদের অনেক সময় বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে এবং পরবর্তীকালে সেসব জায়গায় ভোট ১০ থেকে ২০ শতাংশ পড়েছে, বাকি জায়গায় ব্যালট পেপারে সিল মেরে নেওয়া হয়েছে। এটা তো পরিষ্কার ব্যাপার। এতে জাতীয় পার্টির গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা কমে গেছে এ ধরনের কথা রটনা করা হয়। সরকার থেকে রটনা করে, কিছু সরকার সমর্থিত মিডিয়া এটাকে বিরাটভাবে প্রচার করে আমাদের নিচে নামানোর জন্য।
পূর্ব থেকে আশঙ্কা ও সরকারের ফল নির্ধারণী নির্বাচনে কেন অংশ নিলেন এবং এ নির্বাচন কেন মেনে নেবেন- এমন প্রশ্নে জাতীয় পার্টি চেয়াররম্যান বলেন, আমরা যেসব জায়গায় জয়ী হয়েছি সেখানে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়েছে। যেমন রংপুরে কোনো অনিয়ম হয়নি। কাজেই সরকার যেখানে সুষ্ঠু চেয়েছে সেখানে হয়েছে, যেখানে চায়নি সেখানেই হয়নি।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল আমরা যে নির্বাচনি ফলাফল দেখেছি তাতে আমরা আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। আমাদের কোনো আসন ছাড় দেওয়া হয়নি। আমি বারংবার বলছি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের কোনো জোট হয়নি, কোনো আসন ভাগাভাগিও হয়নি। এমনকি কোনো আসনে ছাড়ও দেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম নির্বাচনে প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকবে, আমাদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র এবং অর্থের প্রভাবমুক্ত পরিবেশ থাকবে। আওয়ামী লীগ আমাদের সেটা কথা দিয়েছিল, নিশ্চিতও করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা ২৬টি আসনে তাদের নৌকা মার্কার প্রার্থী প্রত্যাহার করেছিল। এসব আসনে শক্ত স্বতন্ত্র প্রতিদ্বন্দ্বী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তাদের দলীয় লোকেরা ওই সব প্রার্থীর সঙ্গে কাজ করেছে। তখন আমি বলেছি এটা কোনো আসন ভাগাভাগি বা সমঝোতা নয়। এখন সেটা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ নৌকা না থাকা আসনেও তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
জিএম কাদের আরও বলেন, ভোটের আগের দিন রাত থেকে আমাদের প্রার্থীদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। নির্বাচনের দিন সকাল থেকে আমাদের প্রার্থীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ বিভিন্ন জায়গায় ভোটকেন্দ্র দখল করেছে। আমাদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে তাদের এজেন্টদের দিয়ে সিল মেরেছে। সেখানে প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার আমাদের প্রার্থীদের কোনো সহযোগিতা করেননি। বরং প্রশাসন তাদের পক্ষে কাজ করেছে, যেটা আমরা সব সময় আশঙ্কা করেছিলাম। এটার বিপক্ষেই আমাদের আশঙ্কা ছিল। আওয়ামী লীগ আমাদের কথা দেওয়ার পরও কথা রাখেনি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত ভুল কি শুদ্ধ এখন এটা মূল্যায়ন করা যাবে না। সামনের দিনগুলো দেখতে হবে তারপর আমরা ঠিকভাবে বুঝতে পারব।
এ সময় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগরের সভাপতি ও সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, জেলা কমিটির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আলাউদ্দিন মিয়া, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিমসহ কেন্দ্রীয়, রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের (লাঙ্গল)। আগে এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তার ভাতিজা এরশাদপুত্র রাহগীর আলমাহি সাদ। জিএম কাদের ৮১ হাজার ৮৬৮ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃতীয় লিঙ্গের আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী (ঈগল) পেয়েছেন ২৩ হাজার ৩২৬ ভোট। এ আসনে মোট ছয়জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।