• ঢাকা বুধবার
    ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১

কেন্দ্রে ভোটারবিমুখ করাই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪, ০৮:০১ এএম

কেন্দ্রে ভোটারবিমুখ করাই বিএনপির মূল চ্যালেঞ্জ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আজ। এ নির্বাচন ‘একতরফা’ ও ‘ডামি’ আখ্যা দিয়ে তা বর্জন করেছে বিএনপিসহ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ৬২ রাজনৈতিক দল।

জনমত তৈরি করতে নানা কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। ভোটের দিন আজও হরতাল কর্মসূচি রয়েছে দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপি ও তাদের মিত্রদের। এদিন কেন্দ্রে ভোটারবিমুখ করাই মূল চ্যালেঞ্জ তাদের। এজন্য অধিকাংশ নেতা এখন নিজ এলাকায় অবস্থান করছেন। কেন ভোট দেবেন না-তা ভোটারদের বোঝাবেন তারা।

এছাড়া ভোটের দিন করণীয় নিয়ে নেতাকর্মীদের নানা দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আন্দোলন প্রতিহত করতে ক্ষমতাসীন দল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মারমুখী হতে পারে। তাই যেসব জায়গায় নেতাকর্মীরা আক্রমণের শিকার হবেন, সেই আক্রমণের ছবি বা ভিডিও ধারণ করে রাখতে হবে।

প্রয়োজনে ‘কৌশলে’ আক্রমণ প্রতিহত করতে হবে। শুধু তাই নয়, যেখানে সহিংসতা হবে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের যাবতীয় সহিংসতার প্রমাণ হিসাবে ভিডিও করে তা কেন্দ্রে পাঠাতে হবে।

এছাড়াও নিজ ফেসবুক পেজে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ভিডিও বার্তা দিতে বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত নেতা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের। একই নির্দেশনা ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনকেও দেওয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেয়ে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তারা। ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে সমমনা দল ও জোট, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা সব রাজনৈতিক দল।

তারাও নিজ নিজ জায়গা থেকে কেন্দ্রে যাতে ভোটাররা না যান সেজন্য তাদের নিরুৎসাহিত করবেন। তবে ভোটারদের ভোট প্রদান থেকে বিরত রাখতে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে থেকে কাজ করার বিষয়ে নেতাকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের যে কোনো ধরনের ‘অপতৎপরতার’ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর ২৯ অক্টোবর থেকে চারদফা হরতাল ও ১৩ দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ মিত্ররা। এরপর ‘অসহযোগ’ আন্দোলন ও ভোট বর্জনের লক্ষ্যে জনমত তৈরি করতে ১৪ দিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে।

পরে ভোটকেন্দ্রিক টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণা করে, যা শেষ হবে সোমবার ভোর ৬টায়। ভোটের দিনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ফের কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। আবারও দেশব্যাপী হরতাল কর্মসূচি দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে যারা (সরকার) গত ১৫ বছর অধিকার বঞ্চিত রেখেছে, তাদের ভোটের অন্তত ১ দিন বয়কট করুন। এই ১ দিনের সিদ্ধান্তেই দেশে ফ্যাসিবাদী সরকারের কবর রচিত হবে। স্বাধীনতার সম্মান-গৌরব-মর্যাদা ফিরে পাবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত লাল-সবুজের পতাকা। সর্বাত্মক হরতাল সফল করুন। সবাই মিলে ভোট বর্জন করুন। ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। সারা দিন পরিবারকে সময় দিন। পরিবার-স্বজন, বন্ধুবান্ধব-পরিচিতজন এবং প্রতিবেশীদেরও ভোটের নামে বানর খেলার আসর বর্জন এবং ভোটকেন্দ্রে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করুন।’

ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে সরকারের প্রতি ‘গণঅনাস্থা’ জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। মঞ্চের শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ভোটারদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে যাওয়া মানে এই দুর্বৃত্ত শাসনকে দীর্ঘায়িত করা, লুটপাটকারী-খুনি-মাফিয়া-সন্ত্রাসীদের অবৈধ-দখলদারিত্বকে আরও দীর্ঘায়িত করার সহযোগী হওয়া। কোনো সচেতন মানুষ এই খেলাতে অংশগ্রহণ করতে পারে না। মানুষকে ঘরে থেকে যার যার চেতনা অনুসারে ভোটকে প্রত্যাখ্যান-বর্জন করে এই সরকারের প্রতি আরেকবার অনাস্থা জানাবেন। লাল কার্ড দেখানোর মধ্য দিয়ে সরকারের বিদায় নিশ্চিত করবেন।’

নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করুন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের মতো করে এ ভোট ডাকাত সরকারের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য কোনোভাবে তাদের সহযোগী হবেন না। ভাগাভাগি ও ডামি নির্বাচনের তৎপরতা থেকে বিরত থাকুন।’

ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, ‘জনগণকে ঘরে বসে থাকতে হবে, ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।’

ভোটের দিন আজ গণকারফিউ পালনের আহ্বান জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট ও নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জনগণকে উদ্দেশে বলেন, ‘ভোটের দিন আজ পরিবারকে সময় দিন। নির্বাচন বর্জন করুন। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণকারফিউ পালন করুন, ঘর থেকে কেউ বের হবেন না।

এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের নামে একটি প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে। জনগণকে বলব-প্রহসনের নির্বাচনে ভোটদান থেকে বিরত থাকুন। হরতাল সফল করুন। দেশ ও জাতিকে রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে গণআন্দোলন গড়ে তুলুন।’

পৃথক বিবৃতিতে দেশবাসীকে সর্বাত্মকভাবে ভোট বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইর পির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার নির্বাচন থেকে সংগত কারণেই দেশের জনগণকে বিরত থাকতে হবে। কোন দল সরকার গঠন করবে, কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সব স্পষ্ট। কোন আসনে কে বিজয় হবেন, তার তথ্যও স্পষ্ট। নিজেদের মধ্যে আসন ভাগাভাগি করে ক্ষমতা নবায়ন করে নেওয়ার এ নির্বাচনের ভোট বর্জন করুন। জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটকেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করলেও কেউ কেন্দ্রে যাবেন না।’

ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির নেতারা ‘স্বেচ্ছায় প্রতিবাদী লকডাউন’ কর্মসূচি পালনে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, এই নির্বাচন জনগণের কোনো নির্বাচন নয়।

ঘরে থাকার কর্মসূচি পালনের আহ্বান বাম গণতান্ত্রিক জোটের : ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। এ জোটের শীর্ষ নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স জানান, ‘সরকার সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের পথে না হেঁটে, একতরফা নির্বাচনের পথে হাঁটছে। যা ২০১৪ ও ১৮-এর ধারায় নতুন ধরনের প্রহসনের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। জনগণের সামনে এখন একটাই পথ, তারা স্বআরেপিত ঘরে থাকার কর্মসূচি গ্রহণ করুন। সার্বক্ষণিকভাবে ঘরে থেকে এই ভোট বর্জন করাটাই খুব জরুরি কর্তব্য বলে মনে করি। এটি করার মধ্য দিয়েই সরকারের যে প্রহসনের একতরফা ও একদলীয় নির্বাচন করছে তার প্রতি প্রতিবাদ করা যাবে।’

আর্কাইভ