• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

একটি ফলাফল হতে পারে জেনেই নির্বাচনে যাচ্ছে বাংলাদেশ: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২৪, ০৭:৩৪ এএম

একটি ফলাফল হতে পারে জেনেই নির্বাচনে যাচ্ছে বাংলাদেশ: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রোববার বাংলাদেশে ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু এর ফল কি হবে তা এরই মধ্যে জানা।৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর নারী শেখ হাসিনা পঞ্চম মেয়াদে সুনির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। একে সমালোচকরা ‘ডামি নির্বাচন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

রোববারের এই ভোট বর্জন করছে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তাদের যুক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনের অধীনে নির্বাচন হবে নিরর্থক ও ত্রুটিপূর্ণ।

এ বছর বিশ্বের অনেক দেশে নির্বাচন হবে। তার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম। এটা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের মানদণ্ডের অবনতি হচ্ছে। এ বছর বিশ্বে ভোট দেবেন প্রায় ২০০ কোটি বৈধ ভোটার। 

গত বছর বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে রাজনৈতিক সহিংসতা। এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবি জোরালো ছিল এবং তাদেরকে জোরপূর্বক দমন করা হয়েছে পুলিশ দিয়ে। বিএনপির নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

জেলখানার রেকর্ড উদ্ধৃত করে দলটির একজন নেতা দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, বিএনপির কমপক্ষে ২৪ হাজার ৮০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে জেল দেয়া হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

সহিংসতা প্রবেশ করেছে নতুন এ বছরেও। শুক্রবার একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ফলে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বাচনের আগে এটি ছিল একটি স্যাবোটাজ। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

তারা বলছে, শুধুমাত্র এ পদ্ধতিতেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার। তারা বলছে, সংবিধানে এমন কোনো ব্যবস্থার কোনো বিধান নেই।

নির্বাচনের প্রাক্কালে রিক্সাচালকরা ঢাকার রাজপথে নেমে জনগণকে ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। চারদিকে শেখ হাসিনার বিলবোর্ড। রাজধানীর এমন ব্যস্ত সড়কে তারা স্লোগান দিয়েছেন- এই নির্বাচন বর্জন করুন। একদলীয় শাসন আমরা বিশ্বাস করি না।

ক্ষমতাসীন দল বলছে, তারা আশা করছে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সত্ত্বেও দেশের বৈধ ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে রোববার কমপক্ষে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ ভোট দেবেন। ঢাকায় পোশাকের দোকানের একজন মালিক এবং আওয়ামী লীগের সমর্থক শাহজাহান আলি।

তিনি বিশ্বাস করেন, গত চার বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ছিল শেখ হাসিনার সরকার। এশিয়ায় সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ছিল বাংলাদেশের। ভারতের মতো জায়ান্ট দেশগুলোকে তা অতিক্রম করে যায়। গত বছর উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তখন তিনি বলেন, দেশকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না কখনো। তিনি আরও ঘোষণা দেন, এই দেশ আরও স্মার্ট, উন্নয়নশীল এবং সমৃদ্ধ একটি হিসেবে অগ্রযাত্রা বহাল রাখবে।

ক্ষমতাসীন দল বলছে, তারা আশা করছে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান সত্ত্বেও দেশের বৈধ ১১ কোটি ৯৬ লাখ ভোটারের মধ্যে রোববার কমপক্ষে শতকরা ৬০ ভাগ মানুষ ভোট দেবেন।

নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে শুক্রবার সকালে। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, প্রাকৃতিক নিয়মে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুতে পার্লামেন্টের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, সরকারই দলের ভিতরকার ব্যক্তিদেরকে নিরপেক্ষ প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। এতে তারা মিথ্যাভাবে দেখাতে চায় যে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হয়েছে। বিরোধীরা বলছে তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা থেকে সরে যাচ্ছে না। নির্বাচনের পরেও তাদের লড়াই চলবে। এর জন্য প্রস্তুত তারা।

বিএনপির ছায়া তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সেক্রেটারি একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন, গত ৫ থেকে ৬ মাসে আমাদের দলের কমপক্ষে ১১ জন সদস্য জেলে নির্যাতনে নিহত হয়েছেন। এটা কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন নয়। এমনকি এটা কোনো নির্বাচনই নয়। বিরোধীদেরকে কোনো রাজনৈতিক র‌্যালি করতে দেয়া হয়নি। পুলিশ এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে অব্যাহতভাবে ভীতি প্রদর্শন করছে।

[67744\

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা একটি ‘টোটালিটারিয়ান’ সরকার সৃষ্টি করেছেন। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে তা হতো গণতন্ত্রে তিনি যে আঘাত করছেন তার বৈধতা দেয়া। আমাদের দলের প্রায় দুই হাজার নেতাকে গড়ে দু’বছর করে জেল দেয়া হয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তার বলছে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতার কারণে যথার্থই গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির সদস্যদের।

সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিএনপি যে সংখ্যা বলছে তা ভুল। বিরোধীদের এজেন্ডা হলো দেশের নিরাপত্তাকে বিপদে ফেলা। আমরা সেটা হতে দিতে পারি না।

একেএম ওয়াহিদুজ্জামান বাংলাদেশের তিনটি শক্তিধর মিত্র ভারত, রাশিয়া ও চীনের কড়া সমালোচনা করেছেন শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেয়ার জন্য। এটা আসলে দেশের ভিতরে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি করা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নয়াদিল্লির মধ্যে উদ্বেগ আছে যে, প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার ওপর যেকোনো রকম চাপ দিলে তার প্রশাসন বেইজিংয়ের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে।

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক আমদানিকারকের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সেপ্টেম্বরে তারা সতর্কতা দিয়েছে। জবাবে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন- এমন অভিযোগ করেছেন শেখ হাসিনা।

ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগ্রাসন চালালেও শেখ হাসিনা রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক শক্তিশালী করতে সফল হয়েছেন।

উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এপিকে বলেছেন, শেখ হাসিনার সম্পর্কে কি জানতে চান বলুন। তিনি অত্যন্ত কার্যকরভাবে গ্রেট পাওয়ারের প্রতিযোগিতাকে ম্যানেজ করেছেন।

বুধবার জাতিসংঘ মহাসচিবের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেনসিয়া সোতো নিনো নিউইয়র্কে বলেছেন, আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা আশা করি নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুসংগঠিত উপায়ে হবে।

ওদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এতে তিনি জনগণকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি চলার পথে কোনো ভুল করে থাকি, আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। যদি আবার সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে ভুলগুলো শুধরে নেয়ার সুযোগ পাবো। আপনাদেরকে সেবা করার আরেকটি সুযোগ দিন আমাকে।

আর্কাইভ