• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঢাকা-১ আসন: সব ভোটারের চাওয়া সুষ্ঠু নির্বাচন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩, ০৭:৫৩ এএম

ঢাকা-১ আসন: সব ভোটারের চাওয়া সুষ্ঠু নির্বাচন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে সুষ্ঠু নির্বাচনই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন স্থানীয় ভোটাররা। তারা বলেন, গেল নির্বাচনে এই আসনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। অনেকে আবার ভয়ে ভোট দিতে কেন্দ্রেই যাননি। ফলে এবার ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ থাকা নিয়ে শঙ্কায় আছেন সাধারণ ভোটাররা।

তারা চান নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। ঢাকা-১ আসনের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে। তারা জানান, এবারও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। নবাবগঞ্জের আগলা বাজারের ললনা ফ্যাশানের মালিক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে যেতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা না পেলে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে যাবেন না। একই বাজারের শাফি তয়্যিবা ফ্যাশানের মালিক বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমরা আমাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারব। 
এ আসনটিতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত প্রার্থী। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সালমান এফ রহমান এমপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আম প্রতীকে হাকিম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির একতারা প্রতীকে সামসুজ্জামান চৌধুরী, গণফ্রন্টের মাছ প্রতীকে আলী, ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকে করম আলী ও তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশ প্রতীকে মুফিদ খান। নবাবগঞ্জ-দোহার মিলে এ আসনটিতে ভোটার ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৫ জন। যার মধ্যে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৪৪৫ পুরুষ ও ২ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭ জন নারী ভোটার রয়েছেন। এছাড়া হিজড়া ভোটার আছেন ৩ জন।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন কোনো অবনতি ঘটেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা, নবাবগঞ্জ থানা ও দোহার থানা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ বজায় রাখার জন্য তাদের কড়া নির্দেশ রয়েছে।

এ আসনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের শঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে আমরা কাজ করছি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নির্বাচনি বিধিমালায় যা আছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি। প্রার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, নির্বাচনি বিধিমালা তারা যেন মেনে চলেন।

তিনি আরও বলেন, ভোটকেন্দ্রে নির্ভয়ে গিয়ে ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন সেটি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে। আমরা ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক রাখার জন্য এখানে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করব এবং একটি সুষ্ঠু অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেব। 
ভোটারদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ যদি ভোটারদের ভয়ভীতি বা কোনো ধরনের নির্বাচন আচরণ বিধিমালার পরিপন্থি কাজ করে আমরা যথাযথ আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেব। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মোটরগাড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সেই নির্বাচনে প্রচারের শুরু থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন সালমা ইসলামের নির্বাচনি ক্যাম্প, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

তার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের মাধ্যমে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করে। তা সত্ত্বেও নির্বাচনি মাঠে ছিলেন সালমা ইসলামের নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনের দিন এ আসনে ১৭৮ কেন্দ্রের মধ্যে ১৫০ কেন্দ্রেই মোটরগাড়ি প্রতীকের কোনো এজেন্টকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বাকি কেন্দ্রগুলোতে যেসব এজেন্ট যেতে পেরেছিলেন, তাদেরও ভোট চলাকালে বেলা ১১টার মধ্যেই জোর করে বের করে দেওয়া হয়। এমন নজিরবিহীন ঘটনায় নির্বাচন চলাকালে সংবাদ সম্মেলন করে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন সালমা ইসলাম। তখন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ আসনে আবারও নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

গত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে একজন নির্বাচনি এজেন্ট বলেন, ম্যাডাম ওই কেন্দ্রে ভোট বেশি পেলেও আমাদের হিসাব নিতে দেয়নি। তবে এবার আমরাও শক্ত অস্থান নিয়ে থাকব। যাতে কেউ ভোট ছিনিয়ে নিতে না পারে।

এবারের নির্বাচন নিয়ে অপর এক প্রার্থী বলেন, এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি ভালো আছে। প্রচারণায় কোনো ধরনের বাধা আসছে না। তবে শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে কিনা এ বিষয়ে আমি সন্দিহান।

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান, সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, আমি আশা করব ভোটাররা এবার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার পরিবেশ তৈরি করবে প্রশাসন। ভোট সুষ্ঠু হলে তিনি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আর্কাইভ