প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:৪০ পিএম
রেললাইনে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারের পর রোববার বিকালে ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ চারজনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের প্রত্যেকের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের মধ্যে তিনজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ওই তিনজন হলেন- নেত্রকোনার মদন উপজেলার বারইবাজার এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে জান্নাতুল ইসলাম (২৩), ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বান্দীয়া মেদুয়ারি এলাকার তাইজুদ্দিনের ছেলে মেহেদী হাসান (২৫) এবং গাজীপুরের উত্তর ছায়াবিথী এলাকার সোলাইমান মোড়লের ছেলে শাহানুর আলম (৫৩)।
ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জুলহাস উদ্দিনের আদালতে আসামি শাহনুর আলম, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আসামি মেহেদী হাসান ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলামের আদালতে আসামি জান্নাতুল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান।
গ্রেফতার অন্য চারজন হলেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়া (৫০), জুলকার নাইন আশরাফি ওরফে হৃদয় (৩৫), সাইদুল ইসলাম (৩২) ও সোহেল রানা (৩৮)। এর মধ্যে হাসান আজমল ভূঁইয়া গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র।
দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গত সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাকে বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হলে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তিনি নিজের ভোট প্রদানের জন্যও কেন্দ্র যাননি; কিন্তু ব্যালটে তার প্রতীক (লাটিম) থাকায় ভোটাররা তাকে বিপুল ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেন।
হাসান আজমল ভূঁইয়ার স্ত্রী গাজী রুনা যুগান্তরকে বলেন, তার স্বামী গাজীপুর পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। তিনি এলাকায় খুবই জনপ্রিয় এবং একজন ভালো মানুষ হওয়ায় নির্বাচনে কখনো ফেল করেননি। তার স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অন্যায় করা হচ্ছে বলে তিনি ন্যায়বিচার দাবি করেন।
বুধবার ভোরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বনখড়িয়া এলাকায় আন্ত:নগর মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিল। মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময় গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর ও ভাওয়াল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রেলপথের একটি অংশ কেটে রাখে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে একজন যাত্রী নিহত এবং ১২ জন আহত হন।
গাজীপুর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (দক্ষিণ) উপকমিশনার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের রেলওয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে রোববার দুপুরে গাজীপুর মহানগর পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের চাপ ও দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করতেই রেললাইনে নাশকতার পরিকল্পনা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী আটজন মিলে রেললাইনের কিছু অংশ কেটে রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম, গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান, রেলওয়ে পুলিশের এসপি মো. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন রিমান্ড ও জবানবন্দি গ্রহণের আবেদনে উল্লেখ করেন, গত ১১ ডিসেম্বর রাতে কাউন্সিলর হাসান আজমল ভূঁইয়ার বাসায় ২৫-৩০ জন দলীয় নেতাকর্মী রেললাইনে নাশকতার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর ভোর ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বনখড়িয়া রেললাইনের প্রায় ১৭.৫০ ফুট লাইন কেটে স্থানচ্যুত করে ফেলেন। এতে মোহনগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ সাতটি বগি রেললাইনের ডানে ও বামে পড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই একজন নিহত হন। ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী পরিচালক আশ্রাফুল আলম খান বাদী হয়ে ঢাকা রেলওয়ে থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলা করেন। এরপর ১৬ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে হাসান আজমল ভূঁইয়াসহ সাত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের মধ্যে শাহানুর আলম, জান্নাতুল ও মেহেদী হাসান স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে চাইলে তা রেকর্ড করতে ও বাকি চার আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।