• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে রাজনৈতিক দূতিয়ালি কমিশনের কাজ নয়: সিইসি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৩, ০৩:৪৪ এএম

তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে রাজনৈতিক দূতিয়ালি কমিশনের কাজ নয়: সিইসি

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের কোনো পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়াল।

সম্প্রতি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ দাবি করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ইস্যুতে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি রাজনৈতিক দলগুলোর মীমাংসা করতে হবে। এই ইস্যু নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে কলহ, বিরোধ আছে সেখানে দূতিয়ালি করা আমাদের কাজ নয়।

বিষয়টির মীমাংসা হলে তত্ত্বাবধায়কের অধীন নির্বাচন অবাধ হবে কি না বোঝা যাবে এমনটা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিগত ১০-১৫ বছর ধরেই আন্দোলন হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিমন্ডলে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেটা নিয়ে দেনদরবার করবেন, তারা বিষয়টাকে মীমাংসা করবেন। তার ভিত্তিতে বিষয়টা কখনো যদি নিরোপিত হয়, পরিবর্তিত হয়, তখন সে পরিবর্তিত অবস্থায় নির্বাচন কেমন অবাধ হবে, সেটা তখন বোঝা যাবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এ বিষয়ে আরও কোনো মন্তব্য করতে চান না জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে এবং সংবিধানের অধীনে যে আইনগুলো হয়েছে তার অধীনে নির্বাচন যেভাবে আয়োজন করা দরকার, আমরা সেভাবে করব।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের নিরপেক্ষতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা আছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট আয়োজনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা আমরা চালাবো। কোনো একটি পক্ষ তখনই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন, যখন তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। কিন্তু অনেকগুলো দল নির্বাচনের বাইরে থেকে কেবল একতরফাভাবে এমন অভিযোগ করতে পারে না।  

৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যারা বর্জন করছে, তাদের ভোট প্রায় ৪০ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারকে প্রার্থী নির্বাচন থেকে বঞ্চিত রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কি না এমন প্রশ্ন করা হয় সিইসিকে।

জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এ কারণে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।  নিরপেক্ষতা তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন গোপনে কোনো কারচুপির আমরা সংযুক্ত হবো। যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা কেউ কিন্তু বলছেন না যে নির্বাচন কমিশন নৌকাকে সমর্থন করবে বা তারা গোপনে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলোতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। আপনি যেটা বলেছেন সেই বিষয়টা পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তখনই হতো  যখন বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতো।’

পক্ষপাতের বাইরে থেকে কমিশন কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন পক্ষপাতমূলক হয় না। কারণ যে ৮ লাখ কর্মচারী যারা নির্বাচন কন্ডাক্ট করবেন, তারা কিন্তু সবাই ধারকৃত  সরকারি কর্মচারী। তাদের ওপর নির্বাচন কমিশনকে ডিপেন্ড করতে হবে। তারা যদি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে জেলা প্রশাসন যারা রিটার্নিং অফিসার তারা পোলিং সেন্টারের ভেতরে যারা ভোট নেবেন তারাও যদি ভয়-ভীতিহীনভাবে ভোটিং প্রক্রিয়া দেখভাল করেন, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।

নির্বাচনকালে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিধিবিধান দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটারদের ভোট দেয়াতে নিরুৎসাহিত করতে পারে, বা নির্বাচন প্রতিহত করার পক্ষে কোনোরকম সভা সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তাতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। নির্বাচনী প্রচারণায় যারা অংশ নেবেন তাদের সঙ্গে যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতেই এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, কোনো পক্ষ যদি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করেন, সে বিষয়ে কিন্তু কিছু বলা হয়নি। বলা হয়েছে নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারে বা নির্বাচনের বিপক্ষে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এ ধরনের সভা-সমাবেশ থেকে যাতে সবাই নিবৃত্ত থাকে। তারা বয়কট করে যাচ্ছে বিগত দু‍‍`বছর বা ১০ বছর ধরেই। আপনারা তা দেখেছেন। সেখানে তো বাধা দেয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমান সময়টা খুব ক্রিটিক্যাল। সেজন্যই শুধু ওই কয়েকটা দিনের কথা বলা হয়েছে। ওই সময়ে প্রতিপক্ষের এমন কোনো সভা-সমাবেশ যেন না হয় যাতে করে পক্ষরা সংঘর্ষে, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সে দিক থেকে আমরা এই বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে এনেছি এবং তাদেরকে অনুরোধ করেছি তারা যেন বিষয়টি দেখে।

নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা না রাখা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা থাকবে না। এর কারণ ২ লাখ ৬০ হাজার বুথে নির্বাচন হবে, এজন্য সিসি ক্যামেরা লাগবে প্রায় সাড়ে তিন লাখ। কেন্দ্রীয়ভাবে এই সাড়ে তিন লাখ ক্যামেরা মনিটর করা ‘বস্তুগতভাবে’ সম্ভব না। তাই তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করেই বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে।  

নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা পলিসি কোনো ভূমিকা রাখবে কি না জানতে চাইলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমার এ বিষয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার ওপরে কোনো চাপও নেই। নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে একেবারে মাথা ঘামায় না। সরকারের ওপর কোন চাপ আছে কি না আমি বলতে পারবো না।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ