প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৭:২১ পিএম
ট্রেনে নাশকতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের যন্ত্রাংশ খুলে ফেলে ট্রেনে চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযোগ এবং এ ঘটনায় শিশুসহ চারজন নিহতের ঘটনায় রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, রেলকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মধ্যে ফেলে জনজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা যাতে মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে না পারে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানান তিনি। তারপরও পরিকল্পিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এত বড় রেলপথে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া কঠিন।
দুই-একদিনের মধ্যে রেলপথের নিরাপত্তায় ২৭০০ আনসার মাঠে থাকবে জানিয়ে সুজন বলেন, ইতোমধ্যে এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে রেলের ওপর সহিংসতা ঘটছে উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, ১৩-১৪ সালে যারা রেলে সহিংসতা চালিয়েছিল, সেই একই গোষ্ঠী এখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে।
ট্রেনে বিএনপির নাশকতার শত শত প্রমাণ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হচ্ছে। তাদের বিবৃতি জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
নূরুল ইসলাম বলেন, রিজভী সাহেব নিন্দা জানালেও, বিএনপি যখনই কর্মসূচি দিচ্ছে, তখনই এ ধরনের সহিংসতা ঘটছে। তারা কর্মসূচি ঘোষণা না করলে তো হতো না।
এসময় মন্ত্রী জানান, ট্রেনে আগুন ও প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে।
এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও ট্রেনে নাশকতা। এবারও লক্ষ্যবস্তু মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এবার এর বগিতে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান মা-ছেলেসহ চারজন। ছাই হয়ে যায় তিনটি কোচ। আগুন নিয়েই বিমানবন্দর এলাকা থেকে ট্রেনটি ছুটে চলে তেজগাঁও পর্যন্ত।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ভোর ৫টার দিকে বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর দাউ দাউ করে জ্বল ওঠে ট্রেনটি। আতংকিত যাত্রীরা ভেতরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তবে ট্রেনের চালক বুঝতেই পারেননি আগুন লেগেছে।
চালক বুঝতে বুঝতে ট্রেনটি চলে আসে তেজগাঁও। ট্রেন থামার পর যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ভেতর থেকে নামতে শুরু করেন। তবে তিনটি বগি পুড়ে গেলেও একটির ভেতরে আটকা পড়েন চারজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় চারজনের মরদেহ।
নিহতরা হলেন: নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন (৩)। এছাড়া বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ বছর।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) মো. মাসুদ জানান, মরদেহ চারটি সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে অগ্নিসন্ত্রাসীরা। এতে ট্রেনের ৩টি বগি ভস্মীভূত হয়। ট্রেনটি এয়ারপোর্ট ছেড়ে খিলক্ষেত আসলে যাত্রীরা আগুন দেখতে পান। এরপর সবাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে ট্রেনচালক তেজগাঁও এসে ট্রেন থামান। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। একটি বগি থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ১১তম দফায় ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর সোয়া ৪টার দিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলসড়কের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
গভীর রাতে অবরোধকারীরা রেললাইন কেটে রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘট। এতে এক যাত্রী নিহত এবং সাতজন আহত হন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ট্রেনের বগিগুলো।
এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জেকেএস/