প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:৩৬ পিএম
এক সপ্তাহের মধ্যে আবারও ট্রেনে নাশকতা। এবারও লক্ষ্যবস্তু মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। এবার এর বগিতে আগুন দেন হরতাল সমর্থকরা। এতে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান মা-ছেলেসহ চারজন। ছাই হয়ে যায় তিনটি কোচ। আগুন নিয়েই বিমানবন্দর এলাকা থেকে ট্রেনটি ছুটে চলে তেজগাঁও পর্যন্ত।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। ভোর ৫টার দিকে বিমানবন্দর স্টেশন পার হওয়ার পর দাউ দাউ করে জ্বল ওঠে ট্রেনটি। আতংকিত যাত্রীরা ভেতরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তবে ট্রেনের চালক বুঝতেই পারেননি আগুন লেগেছে।
চালক বুঝতে বুঝতে ট্রেনটি চলে আসে তেজগাঁও। ট্রেন থামার পর যাত্রীরা হুড়োহুড়ি করে ভেতর থেকে নামতে শুরু করেন। তবে তিনটি বগি পুড়ে গেলেও একটির ভেতরে আটকা পড়েন চারজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তেজগাঁও ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌনে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় চারজনের মরদেহ।
নিহতরা হলেন: নাদিরা আক্তার পপি (৩৫) ও তার ছেলে ইয়াসিন (৩)। এছাড়া বাকি দুজনের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ বছর।
নিহত ইয়াসিনের মামা হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, তাদের বাড়ি নেত্রকোনার সদর উপজেলার বরুনা গ্রামে। ৩ ডিসেম্বর তারা বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। ঢাকায় ফিরতে গতরাত ১২টার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে রওনা দিয়েছিলেন। ভোরে তাদের ঢাকায় পৌঁছানোর কথা ছিল। সাথে ছিলেন ইয়াসিনের বড় ভাই ফাহিম (৮) ও তাদের মা নাদিরা।
হাবিবুর জানান, বিমানবন্দর স্টেশনে এসে ট্রেনটি থামলে তখন কিছু যাত্রী সেখান থেকে নেমে যান। এ সময় তাদের পেছনের সিটে থাকা দুই ব্যক্তিও নেমে যান। এরপর ট্রেনটা চলতে শুরু করা মাত্রই পেছনের সিট থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দৌড়ে হাবিবুর ও ফাহিমসহ অন্য যাত্রীরা নামতে পারলেও ভেতরে আটকা পড়েন ছোট ইয়াসিন ও তার মা নাদিরা। তাদেরকে আর কোনোভাবেই বের করতে পারেননি। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিস তাদের মরদেহ বের করেন।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী ইনচার্জ (এএসআই) মো. মাসুদ জানান, মরদেহ চারটি সকালে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, ‘হরতাল সমর্থকরা তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সেপ্রেসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আমাদের কাছে এ সংবাদ আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আমাদের ৩টি ইউনিট পাঠানো হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টার পর পৌনে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। একটি বগি থেকে ৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’
তেজগাঁও থানা পুলিশ বলছে, ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন পার হয়ে ক্যান্টনমেন্টের কাছাকাছি আসলে যাত্রীরা আগুন দেয়ার বিষয়টি টের পায়। যাত্রীরা ছোটাছুটি করে অন্য বগিতে চলে যায়। ট্রেন চালক আগুনের বিষয়টি বুঝতে না পেরে ট্রেনটি চালিয়ে তেজগাঁও স্টেশনে থামায়। ততক্ষণে ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন জানান, নেত্রকোনা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগ করে অগ্নিসন্ত্রাসীরা। এতে ট্রেনের ৩টি বগি ভস্মীভূত হয়। ট্রেনটি এয়ারপোর্ট ছেড়ে খিলক্ষেত আসলে যাত্রীরা আগুন দেখতে পান। এরপর সবাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে ট্রেনচালক তেজগাঁও এসে ট্রেন থামান। পরে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনের ৩টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। একটি বগি থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহতদের লাশ রেলওয়ে পুলিশকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আগুন নেভানো এবং লাশ উদ্ধারের পর ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে, বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ১১তম দফায় ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে গত ১৩ ডিসেম্বর ভোর সোয়া ৪টার দিকে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলসড়কের ভাওয়াল রেলস্টেশনের কাছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়।
গভীর রাতে অবরোধকারীরা রেললাইন কেটে রাখায় এ দুর্ঘটনা ঘট। এতে এক যাত্রী নিহত এবং সাতজন আহত হন। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ট্রেনের বগিগুলো।
এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী সিটি করপোরেশনের এক কাউন্সিলরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।
জেকেএস/