প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৮, ২০২৩, ০২:৫৯ এএম
আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে বলে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তারা বলেন, একতরফা নির্বাচনের লৃক্ষ্যে বিরোধী দলের প্রতি দমননীতি অব্যাহত রাখলে সরকারের বৈধতার সংকট থেকেই যাবে। এতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের শক্তি, সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ বিপর্যস্ত হবে।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) ৪০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়।
তফসিল বাতিল ও জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়- সব দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নিতে।
তফসিল বাতিল করে সংবিধানের ১২৩ (৩) (খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে এর পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের দাবি জানান তারা।
এতে বলা হয়, এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন, সমঝোতায় পৌঁছানো, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি বা জামিন প্রদান এবং নতুন তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ পাওয়া যাবে।
বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ৭ জানুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এই নির্বাচনের আগে আগে নির্বিচার মামলা, গ্রেপ্তার, বিতর্কিত প্রক্রিয়ায় সাজা প্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নির্বাচন; এমনকি রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিদাতারা বলেন, সরকারি দলের মনোনীত প্রার্থীদের সঙ্গে কেবল তাদেরই ডামি প্রার্থী ও অনুগত দলগুলোর প্রার্থীদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন। ফলে এই নির্বাচনে পছন্দমতো যথার্থ বিকল্প বেছে নেওয়া থেকে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বঞ্চিত হবেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিত্ব নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
অতীতের দুটো নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে তারা বলেন, এ ধরনের নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের ফলে সরকারের জবাবদিহি বিলীন হয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে এবং আইনের শাসন ও সুশাসন সুদূরপরাহত হয়ে পড়ে। আমরা তাই অবিলম্বে সকল দলের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন/সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শাহনাজ হুদা ও রোবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ বি এম সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক, সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ও কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল, লেখক রেহনুমা আহমেদ, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের অধ্যাপক স্বপন আদনান, পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমতুল্লাহ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সাংবাদিক কামাল আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, ব্যবসায়ী আবদুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবারক হোসেন, মানবাধিকারকর্মী শিরিন হক, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির (ইডিইউ, চট্টগ্রাম) উপাচার্য মুহাম্মদ সিকান্দার খান, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, সুজন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সম্পাদক আখতার কবীর চৌধুরী, ক্লিনিক্যাল নিউরোসায়েন্স সেন্টার ও বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের পরিচালক নায়লা জামান খান, গবেষক মোবাশ্বের হাসান, মানবাধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এ আর রাজী, লেখক ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক রোজিনা বেগম।
জেকেএস/