• ঢাকা রবিবার
    ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১

কোরবানির পশুতে করোনার ঝুঁকি নেই

প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২১, ০৩:০৩ পিএম

কোরবানির পশুতে করোনার ঝুঁকি নেই

তরিকুল ইসলাম সুমন

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস এক নতুন আতঙ্ক। করোনার এই ভয়াবহতার মধ্যেই পালিত হবে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। কিন্তু করোনার এ সময়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পশুর হাটে গিয়ে পশু ক্রয় এবং আল্লাহর নামে কোরবানিকৃত পশুর গোস্ত কাটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা গবাদিপশু বা এদের মাংসে সংক্রমিতের সুযোগ নেই। তবে তারা পশুর সংস্পর্শে আসাদের থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ  দিয়েছেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহা পরিচালক এবং বতর্মানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন সিটি নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাস ছোঁয়াচে হলেও মানুষ থেকে কোনো গবাদিপশুর মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ যেমন নেই তোমনি মাংসও সংক্রমিত হওয়ার সুযোগ নেই। এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা বৈজ্ঞানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি।

তবে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এক জায়গায় ভির করে গরু ধরা, জবাই করা, কিংবা কাটাকাটি করাটা শঙ্কার। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যারা গরু দেখভালের দায়িত্বে থাকবেন তারা যাতে সুস্থ থাকেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. মোসাদ্দেক হোসেনও দাবি করেন, মানুষ থেকে করোনা গবাদিপশু সংক্রমণের কোনো তথ্য নেই। তিনি সিটি নিউজকে বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। কিন্তু গবাদিপশু সংক্রমণের কোনো তথ্য মেলেনি। আমাদের দেশের প্রাণিসম্পদ গবেষণা কেন্দ্র ও এ সংক্রান্ত কিছু গবেষণা করেছেন বলে জেনেছেন।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই মনে করেন করোনা গবাদিপশু এবং এর মাংসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। এটি স্রেফ ভ্রান্ত ধারণা। বৈজ্ঞানিক কোনো যুক্তি বা তথ্য নেই।

সংক্রমণ নিয়ে সাবেক এই মহাপরিচালক বলেন, যদি কোনো করোনা আক্রান্ত রোগীর লালা বা সর্দি মাংসের সংস্পশে আসে তাহলেও মাংস সংক্রমিত হবে না। মনে রাখতে হবে করোনা বেশি সংক্রমিত হয়ে থাকে নাক, মুখ ও হাতের মাধ্যমে। এগুলো একটু পরপর জীবানুমুক্ত করতে হবে।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, যারা পশু কিনতে হাটে যাবেন, গরু বা ছাগল জবাই করবেন, অথবা জাবাইয়ের জন্য ধরবেন এবং যারা মাংস কাটবেন তাদের থেকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। যাতে করে তারা বেশি মানুষের  সংস্পর্শে না আসেন। বিশেষ করে যারা মাংস কাটবেন (কসাই), তাদের দেখেশুনে কাজে নেয়া। যাদের জ্বর, হাঁচি, কাঁশি রয়েছে তাদের কাজে না নেয়াই উত্তম।

জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতীফ সিটি নিউজকে জানান, করোনাভাইরাস গবাদিপশুতে নয়, কিছু বণ্যপ্রাণী যেমন- বাঘ, সিংহ,ভাল্লুক এবং কয়েক প্রজাতির বানরের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। কোনো গবাদিপশু বা গৃহপালিত পশুতে করোনা সংক্রমণের আশংকা নেই।

তিনি উদাহরণ হিসেবে ক্ষুরা রোগের কথা বলেন, ৩৬ বছর আগে এ রোগে একজন মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর পর থেকে চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ফার্মে ক্ষুরা রোগ দেখা দিলে সকল প্রাণী মেরে ফেলা হয়। আমাদের দেশে জবাই করে খেয়ে ফেলা হয়। বিশ্বে অনেক দেশই এখন অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য গৃহপালিত পশুর জন্য টিকা আবিষ্কার করছে, যেটা তাদের এক্সট্রা প্রিভেনটিভ মেজার।

এই পরিচালক আরও বলেন, গৃহপালিত কোনো প্রাণীর দেহে বা মাংসে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে কি হবে তা বলা যায় না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত কোনো সংস্থার কাছ থেকেও পাওয়া যায়নি। কিছু রোগ আছে জেনটিক যা এনিমেল থেকে মানুষে ছড়ায় আবার মানুষ থেকে প্রাণীতে যায়। করোনা বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেশ কিছু রোগ পশুপাখি থেকে মানুষের দেহে এসেছে। যেমন- বাদুড় থেকে ইবোলা, পোষা তোতা থেকে প্যারট ফিভার, শেয়াল-কুকুরের লালা থেকে র‌্যাবিস, অ্যাকুরিয়ামের মাছ থেকে ইনফেকশন, গরু-ছাগল থেকে ছড়ায় অ্যানথ্রাক্স, ইঁদুর থেকে সবচেয়ে ভয়ংকর প্লেগ, বনরুই থেকে করোনাভাইরাস, বিড়াল থেকে টক্সো প্লাসমোসিস, শিম্পাঞ্জি-গরিলা ও বানর থেকে এইডস, হাঁস-মুরগি থেকে মানুষের দেহে বার্ডফ্লু, সার্স ভাইরাস প্রথমে বাদুড় এবং পরে গন্ধগোকুল থেকে মানুষের দেহে ঢোকে, মার্স ভাইরাস ছড়ায় উট থেকে।

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস—যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র সাতটি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো মানুষের দেহকোষের ভেতরে ইতোমধ্যেই 'মিউটেট করছে' অর্থাৎ গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করছে। যার ফলে এটি আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।

অন্য আশংকা থেকে বিশ্বে প্রথম পশুদের জন্য করোনা টিকার প্রথম ব্যাচ তৈরি করেছে রাশিয়া। পশুপাখিদের ভেতর করোনা সংক্রমণ যেন না ছড়ায় এ জন্য টিকার প্রয়োগ শুরু হয়েছে দেশটি। কারনিভ্যাক-কোভ টিকা নিয়ে চলছে গবেষণা।

তরিকুল/নির্ঝর/সবুজ/এএমকে

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ