• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

জ্বালানি তেল খালাসের নতুন যুগে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৪:৪১ পিএম

জ্বালানি তেল খালাসের নতুন যুগে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইনসহ ১৪ প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের রেশ কাটতে না কাটতেই জেলায় আরও ৬৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যেখানে রয়েছে সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রকল্প (এসপিএম)। যে প্রকল্পটির উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে আমদানি করা জ্বালানি তেল পরিবহন ও সঞ্চালনে এবার নতুন প্রযুক্তিতে সংযোগ স্থাপন করছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম-বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র ও ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ভার্চুয়ালি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রকল্প (এসপিএম)

সিঙ্গেল পয়েন্ট ম্যুরিং প্রকল্প (এসপিএম)। আমদানি করা জ্বালানি তেল পরিবহন ও সঞ্চালনে নতুন এক প্রযুক্তি। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে সরকারের বাস্তবায়িত এই প্রকল্পটি মঙ্গলবার ভার্চুয়ালিভাবে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শরীফ হাসনাত।

তিনি জানান, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় এর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে।

জ্বালানি বিভাগের তথ্য মতে, মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে উপকূল থেকে ছয় কিলোমিটার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) স্থাপন করা হয়েছে। এসপিএম থেকে ৩৬ ইঞ্চি ব্যসের দুটি আলাদা পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল ও ডিজেল আনলোডিং করা হবে।

১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সেই পাইপলাইন প্রথমে নিয়ে আসা হবে কালারমারছড়ায় সিএসটিএফ বা পাম্প স্টেশন অ্যান্ড ট্যাঙ্ক ফার্মে। সেখান থেকে বিভিন্ন পাম্পের মাধ্যমে ৭৪ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল চলে যাবে আনোয়ারার সমুদ্র উপকূলে। সেখান থেকে আবার ৩৬ কিলোমিটার পাইপলাইন পাড়ি দিয়ে তেল নিয়ে যাওয়া হবে পতেঙ্গায় ইআরএলের রিফাইনারিতে। এসব পাইপলাইনে ২০ হাজার টন ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এসপিএম থেকে মহেশখালীতে এসে যেখানে পাম্প হবে, সেখানে দুই লাখ টন ধারণ ক্ষমতার একটি স্টোরেজ নির্মাণ হয়েছে। এর মধ্যে অপরিশোধিত তেল থাকবে এক লাখ ২৫ হাজার টন। বাকি ৭৫ হাজার টন থাকবে ডিজেল।

এসপিএম প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ

এ প্রকল্পের শুরুতে ১৯১ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। পরবতীতে সেটি ৯০ একরে নেমে আসে। সেখানে তিনটি পরিশোধিত ও তিনটি অপরিশোধিত তেলের স্টোরেজ ট্যাংকসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। স্টোরেজ ট্যাংকগুলোতে আমদানি করা তেল মজুদ রাখা হবে। প্রতিটি পরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার ঘনমিটার ও অপরিশোধিত স্টোরেজ ট্যাংকারের ধারণ ক্ষমতা ৩৫ হাজার ঘনমিটার।

স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও এই প্রকল্পের অভ্যন্তরে তিন ও দুই তলা বিশিষ্ট ১৮টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি অ্যাকুমেন্টেশন ভবন, দুটি ইলেক্ট্রনিক ও একটি আবাসিক ভবন রয়েছে। বাকিগুলো ওয়ারহাউজ, ক্লাবঘর ও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন।

এ ছাড়া বল্কভাল্ব স্টেশন, পিগিং স্টেশন, মিটারিং স্টেশন, স্কাডা, মেইন ও বুস্টার পাম্প, জেনারেটর, সিকিউরিটি সিস্টেম ও ফায়ার ভেহিকেল, ফায়ার ওয়াটার নেটওয়ার্ক, পাম্প ও ওয়াটার স্টোরেজ সুবিধাদিসহ ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম রয়েছে প্রকল্পের অভ্যন্তরে। অন্যদিকে নিরাপত্তায় ১৩টি ওয়াচ টাওয়ার, তিন তলা বিশিষ্ট দুটি গেট ও চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। চতুর্পাশে রয়েছে কাঁটাতারের বেষ্টনী। বর্তমানে জার্মানি ও চীনের ৫০ জন প্রকৌশলী কর্মরত রয়েছেন। যদিও প্রকল্পের শুরু থেকে ৫-৬ শত বিদেশি নাগরিক কর্মরত ছিলেন।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানায়, বর্তমানে দেশে তেল রিজার্ভ ক্ষমতা রয়েছে সোয়া দুই মাসের। এসমপিএম প্রকল্প চালুর মধ্যদিয়ে আরও ১৫ দিনের সক্ষমতা বেড়ে আড়াই মাসে উন্নীত হবে। অন্যদিকে ১১ দিনের পরিবর্তে মাত্র ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা তেল খালাস করা হলে বছরে সরকারের বাঁচবে ৮০০ কোটি টাকা।

জ্বালানি বিভাগের তথ্য মতে, দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি বছরে ১৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধন করতে পারে। এসপিএম প্রকল্প প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় ইউনিট। এটি চালু হলে পরিশোধন ক্ষমতা ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে।

২০১৫ সালে নেয়া প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু তিন দফা সংশোধনের মাধ্যমে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু এতেও পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় চার দফা সংশোধন করে মেয়াদ আরও এক বছর  বাড়ানো হয়েছে। আর এতে ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ২১৭ কোটি টাকা। প্রকল্পটির মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জি টু জি ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে এসপিএম প্রকল্প। এতে বৈদেশিক সহায়তা দিচ্ছে চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির ঠিকাদারের দায়িত্বে আছেন চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি চায়না পেট্রোয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি) ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (ইপিসি)। এতে জার্মানি-ভিত্তিক আইএলএফ কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ারস কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে।

এই প্রকল্পে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা দেশের এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ ক্রুড অয়েলবাহী (অপরিশোধিত তেল) জাহাজ  ‘এমটি হোরে’ এসে পৌঁছায় গত ২৪ জুন। আর এই প্রকল্পটির উদ্বোধন হচ্ছে আজ।

৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র, ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন

প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার একই সঙ্গে ৪৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র, ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন খান।

তিনি জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত ৬৭টি প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ১৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৪৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে ১৬৬ কোটি ৫০ লাখ এবং ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে ১৬ কোটি ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ