প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২৩, ০৫:২৩ পিএম
কর্ণফুলীর তলদেশে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আগামী ২৮ অক্টোবর (শনিবার) এটি উদ্বোধনের পর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক জনসমাবেশে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরকে ঘিরে গোটা বন্দরনগরীতে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ জনসভায় ১০ লাখ লোকসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে চলছে সাজসাজ রব। সমতল করা হচ্ছে জনসভার স্থান আনোয়ারার কেইপিজেডের মাঠ। সংস্কারের পাশাপাশি রঙ করা হচ্ছে সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নগরী ও আনোয়ারা প্রান্তে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার আর ব্যানারে ছেয়ে গেছে পথঘাট।
টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ম্যুরাল। সঙ্গে আছে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান। জনসভার স্থানে চলছে মঞ্চ তৈরির কাজ। পরিদর্শন করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
স্থানীয়রা জানান, ১০ হাজার কোটি টাকায় তৈরি ৩.৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ টানেল ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমাবে ৫০ কিলোমিটার। এতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও শিল্পখাতে।
সিএমপির পুলিশের উপ-কমিশনার শাকিলা সুলতানা বলেন, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরের প্রথম পর্বে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেল উদ্বোধন করবেন। এরপর টানেলের ভিতর দিয়ে তিনি আনোয়ারা প্রান্তে যাবেন। তারপর আনোয়ারায় কেইপিজেডের মাঠে রাজনৈতিক জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান করবেন তিনি। এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী ও র্যাবের ডগ স্কোয়াড দিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামেও সাজসাজ রব। সড়ক ও মহাসড়কের আশপাশ ছেয়ে গেছে বিলবোর্ড, ব্যানার, আর তোরণে। পাশাপাশি আঞ্চলিক সড়কগুলোতেও চলছে কার্পেটিং। এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধনের কাজও চলছে সমান তালে।
প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশকে ঘিরে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নিচ্ছে নানা প্রস্তুতি। চলছে ১০ লাখ মানুষ জমায়েতের বিশাল কর্মযজ্ঞ।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে আসছেন। আমাদের টার্গেট প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটানো। যেহেতু সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান। তারপরও আমাদের নেতাকর্মীরা ইনশাআল্লাহ চলে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে ঈদের মতো আনন্দ। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা বিশাল জনসভার আয়োজন করেছি। আশা করি, এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় জনসভা।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুলাই এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু টানেলের টোল নির্ধারণ করে দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু টানেল পারাপারে সর্বনিম্ন টোল ২০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাইভেটকার ও জিপের জন্য। সর্বোচ্চ টোল দিতে হবে ট্রাক ও ট্রেইলারকে। ট্রেইলারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত টোলের সঙ্গে প্রতিটি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে বাড়তি দিতে হবে।
এছাড়া, পিকআপ ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২৫০ টাকা, বাস (৩১ সিটের কম) ৩০০ টাকা, বাস (৩২ আসনের বেশি) ৪০০ টাকা, বাস (৩ এক্সেল) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) ৪০০ টাকা, ট্রাক (৫ দশমিক ০১ থেকে ৮ টন) ৫০০ টাকা, ট্রাক (৮.০১ থেকে ১১ টন) ৬০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৩ এক্সেল) ৮০০ টাকা, ট্রাক ও ট্রেইলার (৪ এক্সেল) ১,০০০ টাকা এবং চার এক্সেলের বেশি ট্রাক ও ট্রেইলারগুলোকে ১,০০০ টাকার সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য আরও ২০০ টাকা করে টোল দিতে হবে।
প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, ৩৫ ফুট চওড়া ও ১৬ ফুট উঁচু দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে ভারী যানবাহন সহজে টানেলের মধ্যদিয়ে চলাচল করতে পারে। নির্মাণাধীন টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩.৪০ কিলোমিটার। এতে ৫.৩৫ কিলোমিটারের একটি অ্যাপ্রোচ রোড ও একটি ৭৪০ মিটার ব্রিজের পাশাপাশি মূল শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিম দিককে এর পূর্ব দিকের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের কাজের উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯.৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ সুদ হারে ঋণ দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা এবং বাকি অংশের অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার।
সাজেদ/