• ঢাকা মঙ্গলবার
    ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

রূপপুরকে ‘যেভাবে নিরাপদ রাখবে’ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩, ০৭:৪৮ পিএম

রূপপুরকে ‘যেভাবে নিরাপদ রাখবে’ আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা!

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখার কথাও জানান সংস্থাটির সর্বোচ্চ নির্বাহী।

অস্ত্র নয়, মানবিক কল্যাণে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের উজ্জ্বল উদাহরণ বাংলাদেশ। রুশ প্রতিষ্ঠান রোসাটমের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় রূপপুরে ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। আর এই মহাযজ্ঞের প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার নীতিমালা যথাযথভাবে মেনে।

সব ঠিক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে জ্বালানি হস্তান্তরের কথা রয়েছে। যেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও। আর সে মাহেন্দ্রক্ষণের আগমুহূর্তে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলো আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল মারিয়ানো গ্রোসির।

বৈঠকে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশের পাশে থাকার কথা জানান সংস্থাটির সর্বোচ্চ নির্বাহী। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বাড়াতে অব্যাহত সহযোগিতা থাকার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার পাশে থাকার এ বার্তা রূপপুরের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনার নিরাপত্তা, আর সুরক্ষিত উপায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন,  নিরাপদে পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ সবকিছুর জন্য আইএইএর সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো ধরনের দুর্বলতা যাতে না থাকে যেমন নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ভৌতনিরাপত্তা, যে ফুয়েল আসবে তার যেন অপব্যবহার না হয় বা হারিয়ে না যায়, সে ক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়িত্বশীলতার ভূমিকা পালন করার প্রয়োজন পড়ে একটি দেশের।

আইএইএর প্রশিক্ষণটি একটি উচ্চমানের প্রশিক্ষণ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ সব সময় অব্যাহত থাকে। কারণ, আইএইএর কাজ হলো সদস্যরাষ্ট্রকে সঠিকভাবে তৈরি করে নেয়া। তারা দেখেন ভৌত অবকাঠোমো সঠিকভাবে তৈরি হচ্ছে কি না; আরেকটি হলো জনবল যথেষ্ট সংখ্যক রয়েছে কি না; সে ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল আছে কি না; আবার সেই জনবল শিক্ষিত কি না। এর মানে হচ্ছে যেভাবেই হোক না কেন তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবেই।’  

আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফী বলেন, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যাট বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় নিরাপত্তায়। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রজেক্টে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ অর্থ এই দিকে নিশ্চিত করা হয়। যেহেতু অঙ্গীকারটি মহাপরিচালক থেকে পাওয়া গেছে, তাহলে মনে হয় বাংলাদেশের এই পরিকল্পনা সঠিকভাবে চলবে। একই সঙ্গে সঠিক পথে বাংলাদেশের একটি দক্ষ জনবল সৃষ্টি হবে, যারা দীর্ঘ সময় এই পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিচালনায় বিরাট ভূমিকা রাখবে।

সরকারের প্রথম পরিকল্পনায় আগামী বছর রূপপুরের প্রথম ইউনিট উদ্বোধন হবে আর সে আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে ইতিবাচক সাড়া দিলেন আইএইএ মহাপরিচালক, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে রূপপুরের কাজ এগিয়ে নেয়ার স্বীকৃতি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটির কার্যক্রম শুরু করার আগেও কিন্তু আইএইএ দল আসবে। সেই সঙ্গে যে ফুয়েল আসবে তারা সেই সব দেখবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সবচেয়ে বড় মাহেন্দ্রক্ষণ। সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে উপভোগ করার জন্য সব কি একটরসরা আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে প্ল্যান্টের দেখভাল করার দায়িত্ব হচ্ছে আইএইএর। কাজেই আইএইএর মহাপরিচালক তখনই আসে যখন সংস্থাটির যথেষ্ট আস্থা থাকে যে কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হচ্ছে এবং সঠিক নিয়মেই হচ্ছে।’  

আইএইএর মহাপরিচালক থাকা পাওয়ার প্ল্যাটটিকে একটি নতুন মর্যাদায় আসীন করবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফী বলেন, আইএইএর গাইডলাইন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে বাংলাদেশের এই প্রকল্পের অন্তত ১০ থেকে ১২টি মাইলস্টোন পার হতে হয়েছে। প্রত্যেক স্তরেই কিন্তু আইএইএর একজন স্বাধীন ইন্সপেক্টর সার্টিফাই করেছেন। কাজেই এ ক্ষেত্রে যখন প্রথম এই পাওয়ার প্ল্যান্ট অপারেশনের যাবে, তখন আইএইএর মহাপরিচালকের উপস্থিতি এটিকে একটি নতুন নিশ্চয়তা দেবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

এদিকে বিদ্যুৎ ছাড়াও কৃষি, চিকিৎসাসহ মানবিক উন্নয়নে সহযোগিতার কথা জানান আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে অ্যাটম ফর ফুড উদ্যোগে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহও প্রকাশ করেন তিনি।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ