প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৩, ০৫:২২ পিএম
প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হলো রেলের ২৮টি ফ্রিজিং কোচ; কিন্তু কেন?। প্রায় তিনশ কোটি টাকার এ প্রকল্পে কেনা হয়েছে ৯৭টি লাগেজ ভ্যানও। উদ্দেশ্য কৃষিপণ্য পরিবহন করা। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মতে, ঢাকার বাজারের সঙ্গে ট্রেনের শিডিউল মিল না থাকায় শাক-সবজি পরিবহনে আগ্রহী হবেন না কেউ।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান জানান, প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে কোনো সমীক্ষা ছাড়াই। ফ্রিজিং কোচ আর লাগেজ ভ্যান কেনার পর রেল কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পকে সফল করার উপায় খুঁজছে।
করোনাকালীনে ঢাকায় খাদ্যপণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পার্সেল ও কৃষিট্রেন চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেল ছাড়া বাকি সব পরিবহন সীমিত আকারে চললেও কৃষকদের তেমন সাড়া মেলেনি এতে। যে দু-একবার চলেছে কৃষিট্রেন, তাতে খাদ্যের পরিবর্তে ঢাকায় এসেছে কয়েক মণ ভিন্ন পণ্য। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় রেলের কৃষিসেবা।
এমন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য চীন থেকে ৩শ কোটি টাকায় ৯৭টি লাগেজ ভ্যান এবং কৃষকের উৎপাদিত মাছ, মাংস, দুধের মতো হিমায়িত পণ্য ঢাকায় আনতে ২৮টি ফ্রিজিং কোচ কিনেছে রেলওয়ে। আন্তঃনগর ট্রেনের সঙ্গে এগুলো সংযুক্ত করার কথা।
কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হিমাগার ট্রেনে বাড়তি খরচ ও ঢাকার বাজারের সঙ্গে রেলের শিডিউলে মিল না থাকায় লাগেজভ্যানে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী হচ্ছেন না কেউ।
কারওয়ান বাজারের এক আড়তদার ও ব্যবসায়ী বলেন, ধরুন রংপুর থেকে সিডিউল মেনে ট্রেন ছাড়ল রাতে, ঢাকায় পৌঁছাল ভোরে। সেখান থেকে (কমলাপুর) এ বাজারে মালামাল আসতে বেজে যাবে সকাল ৯টা; তখন এ মালামাল আর বিক্রি হবে না।
ব্যবসায়ী আরও জানান, এসব ট্রেন শুধু কৃষিপণ্য ও হিমায়িত খাদ্যপণ্য পরিবহন করে সফলতা পাবে কিনা সেটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। আরেক ব্যবসায়ী জানান, কৃষিপণ্য পরিবহন করে লাভ করতে পারবে না ট্রেন। করোনা মহামারির সময়েই পারেনি, এখন তো আরও পারবে না। করোনার সময়ে তো গাড়ি বন্ধ ছিল। ওই সময়টাতে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এ ট্রেন ব্যবহার করেননি।
কারওয়ান বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানান, কৃষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সবজি উৎপাদন করছেন; সেখান থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে বাজারে এনে আবার রেলস্টেশনে আনবেন, তারপর আবার ঢাকা আনার পর কমলাপুর থেকে বাজারে আনবেন - এতে অনেক খরচ পড়বে। কেউ এটা করতে চাইবেন না।
আর রেলের বাণিজ্য বিভাগের কর্মীরা বলছেন, কৃষি কিংবা হিমায়িত পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা নেই রেলের। বাড়বে লোকসানের পাল্লা।
রেলের বাণিজ্য বিভাগের কর্মীরা জানান, যেভাবে রেল আশা করেছিল, মানুষের ফসল ও কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছাবে, সেভাবে তারা তাদের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাননি। মালামাল না থাকার কারণে ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামান সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, বাজার ও চাহিদার সমীক্ষা ছাড়াই নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন প্রকল্প।
তিনি আরও বলেন, হিমায়িত খাদ্য যেটাকে ফ্রিজিং বলা হয়, এটা (ট্রেন) তো এক দরজা থেকে আরেক দরজা পর্যন্ত সেবা পৌঁছে দিতে পারবে না। কোনোভাবেই এটা ব্যবহার করতে পারবে না; কারণ এটা পরিচালনায় যে খরচ আসবে, সেটা রেলের জন্য টেকসই হবে না। সুতরাং সেগুলো ফেলে রাখতে হবে।
ফ্রিজিং কোচ কেনার পর রেলওয়ে এখন বলছে, সফল হওয়ার উপায় খুঁজছেন তারা।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী (অপারেশন) বলেন, ‘দরজা থেকে দরজা পর্যন্ত সেবাটা দেয়া যেত এবং মার্কেটিংটাকে সেভাবে সাজানো যেতো, তাহলে এটার ভবিষ্যৎ আছে। এটা নিয়ে আমরা ভাবছি, কীভাবে কী করা যায়!’
অল্পদিনের মধ্যেই কোল্ড স্টোরেজ লাগেজভ্যান দেশে আসার কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/