• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কৃষি মার্কেটের ভয়াবহ আগুন ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সার্ভিস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩, ০৫:২৯ পিএম

কৃষি মার্কেটের ভয়াবহ আগুন ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে: ফায়ার সার্ভিস

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ঢাকার মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেটে লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কথা জানান সার্ভিসের সদর দফতরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।

তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে।

সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, আগুনের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। তবে প্রতিটি দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে সময় লাগবে। প্রায় ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এ মার্কেটে অগ্নি নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।

প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে জ্বলে আগুন। এখনো চারিদিকে ধোঁয়ায় ছেয়ে রয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। এরই মধ্যে উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দিয়েছে পুলিশ, সেনা, বিমান ও নৌ, বিজিবি, র‌্যাব এবং আনসার।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার রাশেদ বিন খালিদ জানান, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

তিনি আরও বলেন, রাত ৩টা ৪৩ মিনিটের দিকে তারা আগুন লাগার খবর পান। তাৎক্ষণিক তাদের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে যোগ দেয় আরও দুটি ইউনিট। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকায় পরে আরও তিনটি ইউনিট যোগ দেয়। এরপর আরও ৪টি ইউনিট যোগ দেয়। সবশেষ ১৭টি ইউনিট এখানে কাজ করে।

স্থানীয় ও ব্যবসায়ীরা জানান, এরই মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে শত শত দোকান। তাদের অভিযোগ ফায়ার সার্ভিস দেরি করে আসাতে আগুনের ভয়াবহতা বেড়েছে। পুড়ে যাওয়া দোকান থেকে শেষ সহায়-সম্বলটুকু খুঁজে ফিরছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি দোকানের অবস্থা খুবই করুণ।

ক্ষতিগ্রস্ত এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এই দোকানের ওপর আমার সংসার চলত এখন কী করব! সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কিছুই বের করতে পারিনি।’

স্থানীয়রা জানান, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে ধারণা তাদের। 

এদিকে, ঘটনাস্থলে পানির সঙ্কট দেখা দেয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পোহাতে হয় আগুন নিয়ন্ত্রণকারীদের।

এর আগে চলতি বছরের ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বঙ্গবাজারের অন্তত সাড়ে চার হাজার দোকান। ডিএসসিসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে আগুনের ঘটনায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রাজস্ব বিভাগ ও মার্কেট নির্মাণ সেল থেকে পাওয়া তথ্য এবং প্রকৌশলীদের হিসাব অনুযায়ী মার্কেটগুলোর কাঠামোগত দিক বিবেচনায় আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি আগুনে পাঁচ হাজারের বেশি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকার মতো।

অন্যদিকে বঙ্গবাজারের পর ১৫ এপ্রিল ভোরে নিউমার্কেট সংলগ্ন ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। আগুন লাগার প্রায় ২৭ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস।

ভয়াবহ আগুন নেভাতে শুধু ফায়ার সার্ভিসই নয়, যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরাও।

আগস্টে ঢাকায় ১২৮ অগ্নিকাণ্ড
এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে সারা দেশে এক হাজার ৬৬৭টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ২৮ জন আহত হয়েছেন। প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। এরমধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আগুনের ঘটনা ঘটে ১২৮টি। তবে কোনো মৃত্যু নেই।

১২ সেপ্টেম্বর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগস্ট মাসে সারা দেশে এক হাজার ৬৬৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪১৬টি, ময়মনসিংহে ৮১টি, চট্টগ্রামে ২৭৬টি, রাজশাহীতে ২৭৭টি, খুলনায় ২৪৪টি, সিলেটে ৫৫টি, বরিশালে ৭৭ ও রংপুর বিভাগে ২৪১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

মাসিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জুলাই থেকে আগস্ট মাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়েছে ১৯৬টি। গত জুলাই মাসে সারা দেশে এক হাজার ৪৭১টি আগুনের ঘটনা ঘটে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও  জানানো হয়, আগস্ট মাসে সারাদেশে অগ্নিকাণ্ড ব্যতীত অন্যান্য দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৫৭টি। ঢাকা বিভাগে ২১১টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪৩টি, রাজশাহী বিভাগে ২৪৩টি, খুলনা বিভাগে ১১২টি, সিলেট বিভাগে ৩৯টি, বরিশাল বিভাগে ৩৯টি ও রংপুর বিভাগে ১২৫টি দুর্ঘটনা ঘটে।

এসব দুর্ঘটনায় এক হাজার ৬১ জন আহত এবং ১৮৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় উদ্ধার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে ফায়ার সার্ভিস।

এছাড়া রান্না ঘরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ জনিত দুর্ঘটনা ১৪টি, গ্যাস লাইনে ত্রুটি জনিত ১৫টি, লিফট দুর্ঘটনা ৩০টি, ভূমিধস ১৫টি, নদী ও পানিতে ডুবে যাওয়ার ১০২টি দুর্ঘটনা ঘটে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ