প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩, ০২:৫৭ এএম
নকল ঠেকাতে কসমেটিকস ব্যবসার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে লাইসেন্স নেওয়ার বিধান করে ‘ঔষধ ও কসমেটিকস বিল, ২০২৩’ সংসদে পাস হয়েছে। এতে কসমেটিকসের গুণাগুন সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করলে তিন লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর আনা বিরোধীদলীয় সদস্যদের জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনীর প্রস্তাব নিষ্পত্তি করা হয়। যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদসহ কয়েকজন এমপির আনা কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
বিলে ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও বেশি মুনাফার লোভে মজুত করলে ১৪ বছর জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কসমেটিকসের অবৈধ ব্যবহারেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমাম ও শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কসমেটিকস ও ওষুধ দুটি ভিন্ন দ্রব্য। কিন্তু হঠাৎ করেই ঔষধ প্রশাসনের হাতে কেন এ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হলেও কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের সেখানে ডাকা হয়নি।
১৯৪০ সালের ড্রাগস আইন এবং ১৯৮২ সালের আইন দুটিকে এক করে যুগোপযোগী করে এই বিল আনা হয়েছে, এমন দানি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দুই আইন একীভূত করে একটি করা হয়েছে। কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের ক্ষতিসাধন সরকারের উদ্দেশ্য নয়। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেজাল ওষুধ ও কসমেটিকস প্রতিরোধ করাই সরকারের উদ্দেশ্য।
বিলে বিউটি পার্লার বা অন্য কোথাও নিবন্ধিত চিকিৎসক ছাড়া মানবদেহে ফিলার, বোটক্স, গ্লুটাথিয়ন বা অন্য কোনো কসমেটিকস প্রয়োগ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।
প্রস্তাবিত বিলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দায়িত্ব ও কর্মপরিধি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কসমেটিকস বিক্রি, আমদানি ও উৎপাদন করতে হলে লাইসেন্স নিতে হবে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর লাইসেন্স অথরিটি হিসেবে কাজ করবে। এখন যারা কসমেটিকসের ব্যবসা বা উৎপাদন করছেন তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন বিধি প্রণয়ন করবে।
চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মাধ্যমে ওষুধের নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, নতুন ওষুধ ও ভ্যাকসিন মেডিকেল ডেভেলপ করার বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, ওভার দা কাউন্টার ওষুধ ছাড়া রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যতীত কোনো ঔষধ বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ থাকবে এবং এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মেডিকেল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত আইনে ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল ডিভাইসকে ওষুধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কিছু ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করে দেবে বলে বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলের তফসিলে ৩৩ ধরনের অপরাধ চিহ্নিত করে সেগুলোর ক্ষেত্রে কী সাজা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অপরাধের ধরন অনুযায়ী সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা জরিমানা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান করা হয়েছে।
কসমেটিকস উৎপাদনকারী, আমদানিকারী, বাজারজাতকারী বা বিক্রেতাকারী কোনো কসমেটিকসের গুণাগুন সম্পর্কে অসত্য বিজ্ঞাপন দিলে তিন লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে করতে পারছে না। ২৩৬টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুই করছে না। এরমধ্যে আবার তাদেরকে কেন এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, বিষয়টি পরিষ্কার নয়।
জাপার আরেক সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দেশের বাজারে পাওয়া দামি ব্র্যান্ডের কসমেটিকস কেরাণীগঞ্জ ও জিঞ্জিরাসহ পুরান ঢাকায় তৈরি হয়। এগুলো তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল, আটা ও ময়দা দিয়ে। ফলে এগুলো ব্যবহার করে মানুষ ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
গণফোরাম সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই বিলের সঙ্গে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থ জড়িত। এর মধ্যে বেশকিছু ধারা জনস্বার্থ পরিপন্থি হতে পারে। তাই বিলটি কোনো পীর-দরবেশের স্বার্থে তড়িঘড়ি করে পাস করা ঠিক হবে না।
গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, সাধারণ মানুষকে প্রতিমুহূর্তে অসাধু ব্যবসায়ী ও লুটেরারা শোষণ করছেন। তাদের সম্পর্কে বলা যাবে না। আর বাণিজ্যমন্ত্রী তো নিজেই বলে দিয়েছেন সিন্ডিকেটে হাত দেওয়া যাবে না। অবশ্য মানুষ এখন বলে বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই সিন্ডিকেটের মূলহোতা এবং গডফাদার। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ এমন কিছু করবেন না যাতে মানুষের কষ্ট হয়।
দেশের প্রতিটি ব্যবসা অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি বলে দাবি করেন গণফোরামের সংসদ সদস্য। তিনি বলেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর থেকে কিছু ওষুধের মূল্য তালিকা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটার কোনো মনিটরিং নেই। একটা প্যারাসিটামলের দাম এক টাকা কিন্তু এর সঙ্গে একটা কিছু যোগ করে দুই টাকা বা তিন টাকা করে দেওয়া হয়। ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে দেয়। কারণ এটি মূল্য তালিকায় নেই।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/