প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩, ০৫:৫৩ পিএম
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর মালিবাগ লেভেল ক্রসিং এলাকায় রেললাইন অবরোধ করেছেন রেলের অস্থায়ী শ্রমিকরা। রোববার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে রেলের কয়েক`শ অস্থায়ী শ্রমিক ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মালিবাগ এলাকায় রেল লাইন অবরোধ করেন। এসময় তারা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ বন্ধ ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন। এতে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হতে পারছে নো কোনো ট্রেন।
এর আগেও একই দাবিতে শ্রমিকরা রেলপথ অবরোধ করেছিলেন। গত ৪ বছর ধরে আন্দোলন করছেন অস্থায়ী শ্রমিকরা। রেলের কর্মী সংকটের কারণে বিভিন্ন সময় অন্তত ৭ হাজার শ্রমিক অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয় রেলকর্তৃপক্ষ। রেল আইন অনুযায়ী ৩ বছরের মধ্যে চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত অনেকেই ১০-১৫ বছর চাকরি করেও স্থায়ী হয়নি। উলটো এখন তাদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৫ মাস যাবত তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। আউট সোর্সিং বাতিল ও চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন তারা। সর্বশেষ রেলমন্ত্রীর সঙ্গেও কয়েকদফা বৈঠক হওয়ার পরও কোন সিদ্ধান্ত না আসায় শ্রমিকরা সকাল থেকে আবারও রেললাইন অবরোধ করেছেন। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।
রানিং স্টাফের পর এবার কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন রেলওয়েতে কর্মরত অস্থায়ী (টিএলআর) শ্রমিকরা। গতকাল শনিবারের (২ সেপ্টেম্বর) মধ্যে চাকরি স্থায়ীকরণে কোনো পদক্ষেপ না নিলে আজ ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তারা।
এর আগে অস্থায়ী শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। যা গত ১৬ জুলাই থেকে স্থগিত ছিল। যা আজ আবার শুরু হয়েছে।
এদিকে গত রোববার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই কর্মসূচি পালন করেছে রেলের রানিং স্টাফ কর্মচারি সমিতি।
পরে বিভিন্ন আশ্বাসে রেলের রানিং স্টাফ কর্মচারি সমিতি তাদের পূর্বঘোষিত কর্মবিরতি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সময় সারা দেশে ট্রেনের শিডিউলে ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা দূর হয় কর্মসূচি প্রত্যাহার করায়।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্সের বাড়তি টাকা ও সেই অনুসারে পেনশন দেয়ার দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিলেন রেলের রানিং স্টাফরা। তবে এদিন সন্ধ্যায় রেলের রানিং স্টাফ কর্মচারি সমিতি কর্মবিরতি সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করে নেয়।
রেলওয়ে শ্রমিক-কর্মচারী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দাবিদাওয়া নিয়ে বৈঠক হয়েছে। তিনি দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ফোন করেছিলেন। এজন্য আমরা ১০ কর্মদিবসের জন্য কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছিলাম।
রানিং স্টাফদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্রিটিশ রেল আইন অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে দায়িত্ব পালন করা কর্মীদের মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত কাজের জন্য বাড়তি টাকা দেয়া হয়। যা মাইলেজ প্রথা নামে পরিচিত। মূল বেতন অনুযায়ী প্রাপ্য পেনশন থেকে দেয়া হয় ৭৫ শতাংশ বেশি টাকা। এভাবেই বেতন ও পেনশন পেয়ে আসছিলেন রানিং স্টাফরা।
তবে ২০২১ সালে রানিং স্টাফদের মাইলেজ সুবিধা সীমিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পেনশনে পাওয়া অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ টাকাও বাতিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা করেও সুফল পাননি তারা।
এ অবস্থায় রোববার মধ্যরাত থেকে কর্মবিতরতির ডাক দিয়েছিলেন রানিং স্টাফরা। রেলের রানিং স্টাফদের মধ্যে রয়েছেন ট্রেন চালক, সহকারী চালক, টিটিই ও ট্রেন পরিচালকরা।
সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
জেকেএস/