• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

যেসব সুবিধা মিলবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩, ০২:২৭ এএম

যেসব সুবিধা মিলবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলের পর যোগাযোগ খাতে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যানজট নিরসনে দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। সিগন্যাল, ট্রাফিক জ্যামবিহীন এমন এক উড়াল সড়ক দেশের মানুষের জন্য এখন আর কল্পনা নয়, বাস্তব।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) নতুন এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো বাংলাদেশ। দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হবে এই উড়ালসড়ক। এরপর এই সড়ক দিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে কাওলা থেকে ফার্মগেটের তেজগাঁও আসতে সময় লাগবে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিট।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল মহাসড়ক নির্মাণে নেয়া এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। কিন্তু জমি বুঝে না পাওয়া, নকশায় জটিলতা ও অর্থায়নের অভাবে এর নির্মাণ কাজে কেটে গেছে এক যুগের বেশি সময়।

এ কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি সরকারের অন্যতম ধীরগতির প্রকল্পের তকমাও পায়। তবে কয়েক বছর ধরে প্রকল্পটির বিমান বন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজে গতি পায় কয়েকগুণ। পূর্ণাঙ্গ এক্সপ্রেসওয়েটি হবে ফার্মগেট, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। মোট ২০ কিলোমিটার সড়কের সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ খুলে দেয়া হচ্ছে প্রথম পর্যায়ে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, এটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কাওলা) থেকে শুরু করে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ। ২০২৪ সালের জুনে কাজ শেষ করার লক্ষ্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মেইন লাইনের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৫ কিমি এবং র‍্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক শূন্য কিমি। র‍্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিমি। এ অংশে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‍্যাম্প (এয়ারপোর্ট-২, কুড়িল-৩, বনানী-৪, মহাখালী-৩, বিজয় সরণি-২ ও ফার্মগেট-১) রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি র‍্যাম্প যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

উড়ালসড়কটি তৈরি হচ্ছে সরকারের সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধানে। মূল উড়ালসড়ক ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পে ওঠা-নামার জন্য ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প (সংযোগ সড়ক) রয়েছে।  র‌্যাম্পসহ উড়ালসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠা-নামার পদ্ধতি
বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট এই সাড়ে ১১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে স্বাভাবিকভাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টা, কখনো কখনো আরও বেশি সময় লেগে যেত। তবে উড়ালসড়কটি স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসছে।

বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট যেতে কাওলা, কুড়িল আর গলফ ক্লাবে ওঠার ব্যবস্থা থাকবে। একদিকে নামা যাবে বনানী ও মহাখালী আর ফার্মগেটে। অন্যদিকে, তেজগাঁও থেকে বিমানবন্দর যেতে বিজয় সরণি ওভারপাসের দুই প্রান্ত আর বনানী থেকে থাকবে ওঠার ব্যবস্থা। নামা যাবে মহাখালী, বনানী, কুড়িল ও বিমানবন্দর এলাকায়।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মিলবে যেসব সুবিধা
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে কমবে ঢাকার যানজট। ফলে কমবে জনগণের ভোগান্তিও। এমনটাই বলছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে-

নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো:
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। আগে যেখানে বিমানবন্দর দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশের পর যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে কত সময় লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলার উপায় ছিলো না। তবে উড়াল সড়ক দিয়ে এই পথ পাড়ি দিতে গাড়িতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১২ মিনিট।

কর্মঘণ্টা বাঁচবে:
ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত রুট এটি। এই রাস্তায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালুর ফলে একদিকে উড়ালপথে দ্রুত যাতায়াত করা যাবে, অন্যদিকে নিচের সড়কে গাড়ির চাপ কমবে। এতে দুর্বিষহ যানজটের স্বস্তি মিলবে। ফলে ঢাকাবাসীর কর্মঘণ্টা বাঁচবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন:
রাজধানীর উত্তর অংশে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল। সেখানকার বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্প। এসব রফতানি পণ্য রাজধানীর যানজট পেরিয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরসহ নির্ধারিত গন্তব্যে যাওয়া ছিল বেশ ঝক্কির বিষয়। তবে সেই কষ্টের দিন ফুরাবে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। এই উড়াল সড়ক ধরে রাজধানীর চিরায়ত যানজট এড়িয়ে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন। এতে দেশের অর্থনৈতিক চাকা আরও সচল হবে।

স্মার্ট বাংলাদেশের পথে:
এই উড়াল সড়ক দেশের জন্য নতুন দিগন্তের দুয়ার খুলে দেবে এবং সরকারের যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন রয়েছে, সেই লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেবে। এর ফলে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ রাজধানীবাসীর দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত অনেক বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।

ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে সুবিধা:
উন্নত বিশ্বের শহরগুলোতে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যেখানে কমিয়ে আনা হচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে ঘটছে এর উল্টোটি। ঢাকায় প্রায় সাড়ে ৩ লাখ ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে। প্রতিদিন যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০টি নতুন ব্যক্তিগত গাড়ি। বাড়ছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাজধানীতে বাড়ছে যানজট-বিশৃঙ্খলা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি যাদের রয়েছে তারা যখন এই উড়াল সড়ক ব্যবহার করবেন তখন নিচের সড়কের চাপ অনেকটাই কমবে।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সভাপতি আকতার মাহমুদ সিটি নিউজ ঢাকাকে বলেন, মূলত প্রাইভেট গাড়ি এবং আন্তঃজেলা বাসগুলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা বেশি পাবেন।

তিনি বলেন, নগরের মধ্য অঞ্চলে যারা বসবাস করে যেমন ফার্মগেট বা এর আশেপাশের এলাকা থেকে যখন কেউ বিমানবন্দর বা উত্তরার দিকে যাবে তারা এই সুবিধাটা ভালোভাবে ভোগ করতে পারবেন।

আগে যেমন ফার্মগেট থেকে কেউ উত্তরার দিকে বা বিমানবন্দর এলাকায় যেতে চাইতো তখন মাঝপথে অনেক জ্যাম পোহাতে হতো। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের মাধ্যমে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটের মধ্যে সে ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর এলাকায় চলে যেতে পারবেন।

আকতার মাহমুদ আরও বলেন, ঠিক একইভাবে বিমানবন্দর থেকে যখন আন্তঃজেলা বাসে যারা ঢাকায় আসতো তাদের একটা বড় ট্রাফিক জ্যাম উপেক্ষা করে এখানে আসতে হতো, কিন্তু এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের মাধ্যমে কিন্তু তাদের এই কষ্টটা হবে না।

এদিকে বিআইপির সাবেক সভাপতি আকতার জানান, এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলো যে সড়কে গিয়ে নেমেছে সেই সড়কগুলো কিন্তু আগের অবস্থায় রয়েছে। ছয় লেন দিয়ে যাতায়াত করা গাড়িগুলো যদি প্রেসক্লাবের দিকে যেতে চায় তখন এই গাড়িগুলো এসে দুই লেনের মধ্যে পড়বে। সেখানে একটা বটোম নেক তৈরি হবে। অন্যদিকে এয়ারপোর্ট পার হওয়ার পর ওই জায়গায় বিআরটিএর কাজসহ বেশ কিছু উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, এগুলো কিছুটা যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

তবে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলে জানান তিনি। বলেন, যদি আমরা র‌্যাম্পে উঠা-নামার জায়গায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাটা ঠিক মতো রাখতে পারি এবং বিআরটিএর কাজগুলো বা উন্নয়নযজ্ঞ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে পারি, তখন আর কোন অসুবিধা থাকবে না। এই উড়াল সড়কের অর্ধেক কাজ শেষে উদ্বোধন করা হলেও বহু মানুষ অবশ্যই এতে অনেক সুবিধা পাবে।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ