• ঢাকা শুক্রবার
    ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

পেনশনের টাকায় ভোট, এমন দীনতায় আওয়ামী লীগ পড়েনি: শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২৩, ০৩:০০ এএম

পেনশনের টাকায় ভোট, এমন দীনতায় আওয়ামী লীগ পড়েনি: শেখ হাসিনা

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

পেনশন তহবিলের টাকায় ভোট, এমন দীনতায় আওয়ামী লীগ পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা আজকে এসব বলছে তারাই কিন্তু আবার পেনশনে যোগ হবে। এসময় সর্বজনীন পেনশন নিয়ে ‘নেতিবাচক’ প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলন নিয়ে আজকের এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সবার জন্য পেনশনের এ উদ্যোগের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এটা সরকারের ‘নির্বাচনী তহবিল তৈরির ফন্দি’। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক। এর জবাবে তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশনের টাকা কীভাবে কোথায় জমা হবে এবং কীভাবে মানুষ পেনশন পাবে, তা ‘খুব স্পষ্টভাবে’ বলা আছে।

আর এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগ তো ওই রকম দৈন্যতায় পড়েনি। এই টাকা সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে, পেনশন যে স্কিম, সেই স্কিমে টাকাটা থেকে যাবে। যে কেউ তুলে নিতে পারবে না, ব্যবহারও করতে পারবে না।

তাই অপপ্রচারে মানুষকে বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরশ্রীকাতরতায় যারা ভোগে এবং যারা সবসময় একটা ফ্রাসটেশনে ভোগে, যারা নিজেরা কিছু করতে পারে না এবং যারা সম্পূর্ণ অর্বাচীন, অর্বাচীনের এ ধরনের কথায় জনগণ যেন কান না দেয়।

বহু নোবেলবিজয়ীকে কারাগারে যেতে হয়েছে
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের বিবৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভদ্রলোকের যদি এতই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।

তিনি বলেন, এ রকম বহু নোবেলবিজয়ী আছেন, যাদের পরবর্তীতে কারাগারেও যেতে হয়েছে। একজন নোবেলজয়ীর বিষয়ে আপনারা এত উদ্বেগে আছেন। তার অপরাধটা আপনারা দেখেন না। তিনি যে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে নিয়ে ব্যবসা করেছেন সেটি উনি করতে পারেন কী না সেটি বিবেচনা করবেন না?

এসময় যারা বিবৃতি দিচ্ছে তাদের কাছে আনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আহ্বান করব, যারা বিবৃতি দিচ্ছে তারা নিজেরা লোক পাঠাবে, সব দলিল দেখবে। তারাই বিচার করেন কোনো অপরাধ আছে কি না। না হলে আমাদের শ্রম আইন আছে। মামলা আইন অনুযায়ী চলবে, কোনো বিবৃতিতে প্রভাবিত হবে না।

বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী

ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে হাত দেয়া যাবে না- বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির এমন বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখব এটা, কে কত বড় সিন্ডিকেট। আর বাণিজ্যমন্ত্রীকেও আমি ধরতেছি।

সাইফুল আলম বলেন, মন্ত্রীরাও সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করেন, কিন্তু তারা তাদের প্রতিরোধ করতে পারেন না। বলেন, ওইখানে হাত দেয়া যাবে না, বিপদ আছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী জানতে চান কোন মন্ত্রী এমন কথা বলেছেন। তখন জানানো হয়, খোদ বাণিজ্যমন্ত্রী নিজে বলেছেন, তাদের ওইখানে হাত দেয়া যাবে না।

তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক আছে বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমি ধরতেছি।

ডিম সিদ্ধ করে ডিপ ফ্রিজে রেখে খেতে পরামর্শ

খাদ্যপণ্যের সিন্ডিকেট ভাঙতে কমদামে যখন পণ্য পাওয়া যায় তা কিনে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, আমাদের দেশে পণ্যের সিন্ডিকেট নতুন কিছু নয়। তবে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে আমাদের নিজেদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন সময় যখন কমদামে বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়, তা কিনে সংরক্ষণ করতে হবে। যেমন- দেখলাম ডিমের দাম বেড়ে গিয়েছে। যখন কমদামে ডিম পাওয়া যায় তা কিনে সিদ্ধ করে ফ্রিজের ডিপে রেখে দেবেন। পরে সেখান থেকে নামিয়ে রান্না বা ভর্তা করে খাবেন।

তিনি এ সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য কয়েকটি বড় হাউসকে দায়ী করেন। বলেন, খাদ্যপণ্য নিয়ে কয়েকটা হাউস আছে, তারা কারসাজি করে। তবে সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না তা ঠিক না।

নির্বাচন নিয়ে চাপ নেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারে সেটাই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, ভবিষ্যতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। নির্বাচন নিয়ে কোনো চাপ নেই।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণটা কার? ভোট চোরদের, ভোট ডাকাতদের, খুনি, জাতির পিতার হত্যাকারী, ২১ আগস্টের হামলাকারীদের? এদের মানুষ চায়? এদের প্রতি তো মানুষের ঘৃণা আছে।

তিনি বলেন, আমার কাছে অংশগ্রহণ বলতে জনগণের অংশগ্রহণ, সেটা থাকবে। জনগণ ইতোমধ্যে সব নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে।

শিংবিহীন ‘সিংহ’ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই

শিং নেই তবু সিংহ। এ নিয়ে চিন্তার কী আছে বলে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নেতাদের সিঙ্গাপুর যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি এমন মন্তব্য করে বলেন, দেশে জায়গা না পেয়ে বিদেশে গিয়ে কার শিং গজালো, তার খোঁজ আমি নিতে পারব না।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিদিনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম রনির প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে জায়গা না পেয়ে বিদেশে গিয়ে কার শিং গজালো, তার খোঁজ আমি নিতে পারব না। সিঙ্গাপুর গিয়ে কার শিং গজালো সেটা আমি দেখব কোথা থেকে। তারা সেখানে শিং ধার করতে গেছে কি না, গুঁতা মারবে, বাংলাদেশের জনগণকে নির্বাচন করতে দেবে না, গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করব কে কোথায় গেল, কী করল।

জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবে তারাই সরকারে আসবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ ভোট দেবে, সেই ভোটে যারা নির্বাচিত হবে, জয়ী হবে তারাই সরকারে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এটা মাথায় রাখতে হবে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ৩০টি সিট পেয়েছিল। তারপর থেকে বিএনপি তো ইলেকশন করে না। তারা শুধু বাণিজ্য করে, নমিনেশন বেচে। কিছু টাকা গুলশান অফিস পাবে, পুরানা পল্টন পাবে, আর মোটা অংকের টাকা যাবে লন্ডনে। এই তো তাদের নির্বাচনে অংগ্রহণ। শেখ হাসিনা বলেন, নিজেরাই নির্বাচনে গণ্ডগোল করবে, মারামারি করবে আর বলবে ইলেকশন করতে পারলাম না। বর্জন করলাম।

ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য কাউকে বলা হয়নি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে কাউকে বলা হয়নি। বাংলাদেশ চাইলে পাবে না, সে অবস্থা আর নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আমাদের আগে থেকেই জানিয়েছেন, তারা ধাপে ধাপে নেবে। সদস্য সংখ্যা পরে বাড়াবেন। আমরা জোর দিয়েছি, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বিষয়ে।

তিনি বলেন, আমরা এখন বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার অবস্থানে নিয়ে গেছি। তারাও জানে, বাংলাদেশ এখন ভিক্ষা চাওয়ার মতো দেশ না।

 

সিটি নিউজ ঢাকার ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন

 

জেকেএস/

আর্কাইভ