প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৩, ০৩:৫৬ এএম
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলক পাহাড়ি ফল আনারস চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। বাড়ির পাশে আনারসের দুটি মাথা লাগালে একটি গাছে আনারস ফল ধরে। তারপর তিনি ছোট পরিসরে মাল্টা বাগানে সাথি ফসল হিসাবে আনারস চাষ শুরু করেন। গাছে এখন কাঁচা-পাকা আনারস মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক কৃষি উদ্যোক্তা প্রতিদিন আনারস বাগান দেখতে ভিড় করছেন। ১৯টি গাছে ফল এসেছে। পাকা আনারস খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি ও রসালো।
সাথি ফসল হিসাবে মৌসুমে আনারস চাষ লাভজনক। ক্যালেন্ডার ও জায়েন্ট কিউ জাতের আনারস চাষ হচ্ছে। আনারস চাষ জেলায় ছড়িয়ে দিতে পারলে ফলের চাহিদা পূরণ হবে। আর অন্য জেলা থেকে আনারস আনতে হবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জেলায় কৃষকদের আনারস চাষে আগ্রহী করে তুলতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কৃষকদের মাঝে সহজে চারা সরবরাহ করা যায় সে জন্য কাজ করছে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বড়গাংনি গ্রামের বাজারপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ছোট পরিসরে বাড়ির পাশে ২০২২ সালে মাল্টা বাগানে সাথি ফসল হিসাবে আনারস চাষ শুরু করেন। এর আগে তিনি ২০১৫ সালে বাজার থেকে খাওয়ার জন্য দুটি আনারস কিনে আনেন। আনারস দুটির মাথা (ক্রাউন) লাগালে একটি মারা যায়। অন্যটি থেকে কয়েক মাস পর একটি আনারস ফল ধরে। পরের বছর একই গাছ থেকে আরও একটি আনারস ধরে। ২০২১ সালে ৫টি গাছ লাগান। ২০২২ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে ক্যালেন্ডার ও জায়েন্ট কিউ জাতের ২৫০টি চারা সংগ্রহ করে উপজেলা কৃষি অফিসার তাকে দেন। তিনি নিজে স্থানীয়ভাবে আরও ১৫০টি আনারসের মাথা সংগ্রহ করে। মাল্টা বাগানের দুই লাইনের মাঝে আনারস গাছের চারা ও মাথা রোপন করেন।
আনারস গাছ লাগানোর অল্প দিনেই ফুল আসতে শুরু করে। এরপর আনারস ফলে পূর্ণতা পায়। কাঁচা অবস্থায় আনারসের রঙ সবুজ ও পাকলে হাকলা হলুদ রঙের হয়। পাকা আনারস খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি ও রসালো। আকারেও বাজারে পাওয়া আনারসের মত বড়। আনারস চাষে তেমন একটা খরচ হয় না। জৈব সার, রাসানয়িক সার, পানি সেচ ও নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়।
সাথি ফসল হিসাবে আনারস চাষ লাভজনক হবে। আনারস গাছ ছায়া জায়গায় ভাল হল। অতিরিক্ত তাপে আনারস গাছ মারা যায়। দুর-দুরন্ত থেকে সাধারণ মানুষ আনারস বাগান দেখতে ছুটে আসছেন। ১০ কাঠা জমিতে লাগানো ৪০০ আনারস গাছে এ বছর ১৯টি ফল ধরেছে। আগামি বছর গাছগুলো পূর্ণতা পেলে বেশি ফুল ও ফল ধরবে।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা হাটবোয়ালিয়া গ্রামের সোহেল হুদা বলেন, বড়গাংনি গ্রামের একজন কৃষক তার জমিতে আনারস চাষ করছে। প্রথমে বিশ্বাস না হলেও পরে নিজের চোখে দেখার পর বিশ্বাস হয়েছে। আনারস তো পাহাড়ী এলাকায় চাষ হয়। কৃষককের কাছ থেকে আমি পরামর্শ নিয়েছি। কিছু চারা সংগ্রহ করে ছায়া যুক্ত স্থানে লাগাবো।
মেহেরপুর জেলার গাংনি গ্রামের আতিকুজ্জামান জানান, আমার এলাকার কৃষি অফিসারের মাধ্যমে বিষয়টি শুনেছি। সকালে কয়েক বন্ধু মিলে আনারস বাগান দেখতে আসলাম। গাছে ফল ধরে রয়েছে। দেখে খুব ভাল লাগলো। পড়াশুনার পাশাপাশি পেয়ারা বাগানে সাথি ফসল হিসাবে আনারস লাগানোর চিন্তা করছি।
চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলার বড়গাংনি গ্রামের আনারস চাষি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, খাওয়ার জন্য বাজার থেকে দুটি আনারস কিনে নিয়ে আসি প্রায় ৮ বছর আগে। আমার স্ত্রীকে বলি আনারস কাটার পর মাথা দুটি রেখে দেওয়ার জন্য। বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় আনারসের মাথা দুটি লাগিয়ে দিউ। একটি মরে যায়। অন্য গাছ বড় হওয়ার পর একটি ফল পায়। সে থেকে মাথায় ঢোকে বাড়ির পাশের বাগানে সাথি ফসল হিসাবে আনারস চাষ করবো।
শখের বসে কৃষি অফিসারের মাধ্যমে ২৫০টি চারা সংগ্রহ করে বাগানে লাগাই। আর বাকিগুলো স্থানীয় ভাবে আনারসের মাথা সংগ্রহ করে লাগাই। এবার বাগানে ১৯টি ফল ধরেছে গাছে। ভাল লাগছে গাছে ফল দেখে। বাজারের আনারসের চেয়ে বাগানের ফল মিষ্টি, রসালো ও সুস্বাদু। স্বল্প সুদে লোন পেলে এ চাষ বড় পরিসরে করার ইচ্ছা আছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসার আনারস বাগান নিয়মিত দেখাশুনা করতেন। তিনিই চারা সংগ্রহ করে কৃষককে দেন। চুয়াডাঙ্গার গরম আবহাওয়াতে আনারস চাষ সম্ভব করেছে কৃষক আব্দুর রাজ্জাক। ফলের আকার ভালো ও মিষ্টি। আনারস পুষ্টিগুণে ভরা একটি ফল। জেলায় এ চাষ ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
এমএম/