প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২৩, ০১:৩৮ এএম
গত জুলাই মাসে ৫৬৮টি সড়ক, রেল ও নৌ-দুর্ঘটনায় ৬৪৪ জন নিহত ও ১,০৭৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে; আহত হয়েছেন ১,০৫৫ জন। একই সময় ৪৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত ও পাঁচ জন আহত হয়েছেন। ১৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত, ১৫ আহত ও ৩৮ জন নিখোঁজ হয়েছেন।
শনিবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, জুলাইয়ে ১৮০টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৯৫ জন নিহত ও ১২২ জন আহত হয়েছেন; যা মোট দুর্ঘটনার ৩৫.৬৪%।
জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১৫৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৮ জন।
সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১৫৪ জন চালক, ৮৯ জন পথচারী, ৪২ জন পরিবহন শ্রমিক, ৩৬ জন শিক্ষার্থী, আটজন শিক্ষক, ১১৭ জন নারী, ৬৪ জন শিশু, একজন সাংবাদিক এবং দশজন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়া ৭৩১টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৫.৯৯% মোটরসাইকেল, ২২.৮৪% ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ১৮.৭৪% বাস, ১৫.৩২% ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৫.৭৪% সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ৪.৫১% নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৬.৮৩% কার-জিপ-মাইক্রোবাস।
মোট দুর্ঘটনার ৫৪.৫% গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৬.৭৩% মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩.৬% নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ৫.৫৪% বিবিধ কারণে, ০.৩৯% গাড়ির চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.১৯% ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংঘঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৮.৬১% জাতীয় মহাসড়কে, ৩০.৬৯% আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪.১৫% ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধানতম কারণ সড়কে নৈরাজ্য। আর এই নৈরাজ্যের পেছনে প্রধানত পরিবহন মালিকরা দায়ী হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফিটনেসহীন যানবাহন তারাই সড়কে নামান। কম মজুরি দিতে সেগুলো চালান অদক্ষ চালক দিয়ে। তবে তাদের দায় নিতে হয় না। দায় গিয়ে বর্তায় চালকের ওপর।
পরিবহন শ্রমিক নেতাদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ৮০% ক্ষেত্রে চালকদের দায়ী করা হয়। কিন্তু এর পেছনে কী কারণ আছে তা দেখা হয় না। চালকদের কোনো নিয়োগপত্র নেই, নির্ধারিত বেতন নেই। তাদের ট্রিপ ভিত্তিক মজুরি দেওয়া হয়। তাই তারা বিশ্রাম না নিয়ে ঘন্টার পর ঘণ্টা গাড়ি চালাতে বাধ্য হন। বেশি গাতিতে গাড়ি চালান।
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, “সাধারণভাবে চালকদের সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রধানভাবে দায়ী করা হলেও আমরা গবেষণায় দেখেছি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকদের দায় চার নম্বরে। এক নম্বরে অব্যবস্থাপনা তারপরে আছে গাড়ির ফিটনেস। তারপরে সড়ক ব্যবস্থা। ঢাকা শহরে ৮০% বাস-মিনিবাসের কোনো ফিটনেস নাই। আর দূর পাল্লার বড় বড় কয়েকটি পরিবহন কোম্পানি ছাড়া অন্যদের গাড়ির কোনো ফিটনেস ও রুট পারমিট নাই।”
তিনি আরও বলেন, “এসবের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান করা হলেও এগুলো চলে সমঝোতার ভিত্তিতে। মালিকপক্ষ এতই শক্তিশালী যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না।”
শ্রমিকের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) ২০১৭ সালের এক গবেষণা বলছে, পরিবহন খাতের ৮৬% শ্রমিক দৈনিক ১৩ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। এই খাতের ৯০% শ্রমিকের সাপ্তাহিক ছুটি নেই।
গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, বাংলাদেশে বাস-মিনিবাস রয়েছে ৮০ হাজার। সব ধরনের যন্ত্রিক যানবাহন মিলিয়ে এর সংখ্যা ৫৭ লাখ। সিটি সার্ভিসের বাস-মিনিবাসের ৬০% এরই কোনো ফিটনেস নাই। আর দূর পাল্লার বাসের ৩০% এর ফিটনেস নাই। বাংলাদেশে বাস মিনিবাসের বৈধ লাইসেন্সধারী চালক আছেন ৪০ হাজার। তাই বাস মিনিবাসে লাইসেন্সবিহীন চালকদের দৌরাত্ম চলে। পুরো গণপরিবহন খাতের ১% এরও কম সরকারের নিয়ন্ত্রণে। বেসরকারি মালিকেরা এই খাত নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করে চলে এই খাত।