প্রকাশিত: জুলাই ৩, ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম
আগামী সেপ্টেম্বরেই চালু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রথম দফায় ১৪টি র্যামসহ চালু হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত। এরই মধ্যে এ কাজের ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সিটি নিউজ ঢাকাকে এ তথ্য দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আপাতত এ পথে যে কোনো জায়গায় নামলেই একশ টাকা টোল নির্ধারণ করা থাকলেও পুরোপরি চালুর আগে তা কিছুটা শিথিল করার কথা ভাবা হচ্ছে।
রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট এক টানে পাড়ি। নেই ট্রাফিক, নেই যানজট। আট থেকে দশ কিলোমিটার এ পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। এমন স্বপ্ন এবার সত্যি হবার পথে।
পাখির চোখে তাকালে বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত দেখা মিলবে এক নতুন পথের। এদিকে এয়ারপোর্ট থেকে কুড়িল হয়ে বনানী পর্যন্ত পিচ ঢালাইয়ের কাজও প্রায় শেষ। হয়ে গেছে রোড ডিভাইডারও। কোথাও কোথাও রোড মার্কিংও শেষ। রাতে পথ দেখাতে সড়ক বাতিগুলোও প্রস্তুত করা হয়েছে। আর ওদিকে বনানী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত এখনই চাইলে গাড়ি নিয়ে পাড়ি দেয়া যাবে এ পথে।
নানা সংকটে বারবার সময় বাড়িয়ে অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রথম ভাগ। লক্ষ্যটা সেপ্টেম্বর; আর এরই মধ্যে এগিয়েছে নব্বই শতাংশের বেশি কাজ।
এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার আরও বলেন বলেন, ‘তেজগাঁও পর্যন্ত ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে; বামদিকে কিছু কাজ বাকি আছে। এটি শেষ হলে বনানী পর্যন্ত যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। আমাদের টার্গেট হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত কাজ শেষ করা।’
যেহেতু এ পথ পাড়ি দিতে হবে টোল দিয়ে, তাই এটি আদায়ের প্লাজাগুলোও প্রস্তুত। ১৭টি র্যামের মধ্যে প্রথম দফায় বিমানবন্দর, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, বিজয় সরণি ও ফার্মগেট ১৪টি চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। আংশিক চালু হওয়ায় টোল কিছুটা সমন্বয় করার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
তিনি বলেন, যেহেতু প্রকল্পটি আংশিক চালু হচ্ছে, তাই টোল কমানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে মগবাজার থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত এগিয়ে যেতেও কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে।
এবার এক নজরে দেখে নেয়া যাক ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে:
প্রকল্পের নাম: ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (পিপিপি প্রকল্প)
প্রকল্পের অবস্থান: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী)।
অর্থনৈতিক প্রভাব: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ কমবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ হবে এবং আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
নির্মাণের কারণ:
* ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ অংশের সংযোগ ও ট্রাফিক ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি।
* যাতায়াতে সময় হ্রাস ও ভ্রমণ আরামদায়ক করা।
* উত্তর ও দক্ষিণ গেইটওয়ের সংযোগ উন্নতকরণ।
* এশিয়ান হাইওয়ে (এ এইচ) করিডোরে উন্নত পর্যায়ের সেবা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি আঞ্চলিক সংযোগকে উন্নতকরণ।
* যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন খরচ কমানো।
জিডিপিতে প্রভাব: প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান: ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (এফডিইই) কোম্পানি লিমিটেড।
বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান: ইতালিয়ান থাই ডেভলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড (থাইল্যান্ড) ৫১ শতাংশ; চায়না সানদং ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কোঅপারেশন গ্রুপ (সিএসআই) ৩৪ শতাংশ এবং সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড ১৫ শতাংশ।
প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
আয়তন: মূল এলিভেটেড অংশের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কি.মি.। প্রকল্পে ওঠানামার জন্য মোট ২৭ কি.মি দীর্ঘ ৩১টি র্যাম্প রয়েছে। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কি.মি.।
চুক্তি স্বাক্ষর: ১৯ জানুয়ারি, ২০১১
সংশোধিত চুক্তি স্বাক্ষর: ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩
প্রকল্পের মেয়াদ: জুলাই ২০১১- জুন ২০২৪
প্রাক্কলিত ব্যয়: ৮,৯৪০ কোটি টাকা
কার্যকারিতা গ্যাপ ফান্ডিং (ভিজিএফ): ২,৪১৩ কোটি টাকা (প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৭ %), যা বাংলাদেশ সরকার বহন করবে।
বিনিয়োগকারীর আর্থিক সংস্থান: চায়না এক্সিম ব্যাংকের (EXIM) সাথে ৪৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কর্মাশিয়াল ব্যাংক অফ চায়নার (আইসিবিসি) সাথে ৪০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের (সর্বমোট ৮৬১ মিলিয়ন ডলার) ঋণচুক্তি। এরই মধ্যে ছাড় হয়েছে মোট ৩৪৩.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
প্রকল্পের ধাপ: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের দক্ষিণে কাওলা হতে বনানী রেল স্টেশন পর্যন্ত (চে. ০+০০০ মি. হতে চে. ৭+৪৫০ মি:), যার দৈর্ঘ্য ৭.৪৫ কি.মি.।
২য় ধাপ: বনানী রেল স্টেশন হতে মগবাজার রেল ক্রসিং পর্যন্ত (চে. ৭+৪৫০মি: হতে চে. ১৩+৩০০ মি:), যার দৈর্ঘ্য ৫.৮৫ কি.মি।
৩য় ধাপ: মগবাজার রেল ক্রসিং হতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত (চে. ১৩+৩০০মি: হতে চে. ১৯+৭৩০ মি:), যার দৈর্ঘ্য অবশিষ্টাংশ।
কাজ শুরু: ২০২০ সালের ০১ জানুয়ারি। আর কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল ৩০ জুন, ২০২৪, যা এখনও চলমান।
জেকেএস/