প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম
নীলফামারীতে পানির দামে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির চামড়া। আর কোরবানিদাতারা বলছেন, চামড়া যেন গলার কাঁটা। এতে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এতিম, অসহায় ও গরিব মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) বিকালে জেলা শহরের বড় বাজার ট্রাফিক মোড়, চৌরঙ্গীর মোড়, আনন্দবাবুর পুল ও উকিলের মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
শহরের বাড়াইপাড়া মহল্লার মৌসুমি ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে গ্রাম ঘুরে প্রতি পিস ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে ৩০ পিস গরুর চামড়া কিনে বিকালে বাজারে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চামড়া কিনে পথে বসতে হবে।’
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১৫ হাজার টাকার চামড়া কিনে এখন বাজারে পাইকাররা দাম করছে অর্ধেকের একটু বেশি। চামড়ার একমাত্র উপকরণ লবণ। সেই লবণ দোকান থেকে চড়াদামে কিনতে হচ্ছে।’
সদরের ইটাখোলা ইউনিয়নের চৌধুরী পাড়া গ্রামের অপর মৌসুমি পাইকার আলতাফ হোসেন বলেন, গ্রাম ঘুরে ৫০ পিস ছাগলের চামড়া এক হাজার ৫০০ টাকায় কিনে এখন বাজারে পাইকার ব্যবসায়ীরা দাম করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এখন কী হবে জানি না। প্রতিটি চামড়া ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কিনে এখন পাইকারের কাছে পানির দামে দিতে হচ্ছে।
জেলা শহরের ট্রাফিক মোড় বড় বাজারে ১০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে গরুর চামড়া। আর ছাগলের চামড়া প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায়। এতে বেশি মূল্যে চামড়া কিনে হাজার হাজার টাকা লোকসানে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
শুক্রবার (৩০ জুন) সকালে ওই মোড়ে ছাগলের চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, ‘গত বছর ১০০ পিস ছাগলের চামড়া কিনে পানির দামে বিক্রি করেছি। এবার সরকারি রেট ধরে চামড়া কিনে কী যে হবে, তা বলা মুশকিল। আড়তদাররা একচেটিয়া ব্যবসা করে। ফলে ফড়িয়া ও ছোট ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়। তারা যা বলে, তাই আমাদের শুনতে হয়।
জেলা শহরের জোড়দড়গা মাদ্রাসার শিক্ষক আহমেদ হুসেন জানান, এতিম শিক্ষার্থীদের জন্য গরু, ছাগল মিলে ১৮০ পিস চামড়া কালেকশন করা হয়। বর্তমানে ওই চামড়া বিক্রি করে পরিবহন খরচই উঠবে না। তিনি বলেন, আমরা যখন বাজারে চামড়ার ব্যাগ, স্যান্ডেল, পার্স ও মানিব্যাগ (চামড়াজাতীয় পণ্য) কিনতে গেলে বেশি দামে কিনতে হয়। এর কারণ কী? অথচ বছরের একবার কোরবানির পশু জবাই হয়, তাও আবার সেই চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে হয়। এসব দেখার কেউ নেই।
জেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন চামড়া (আড়তদার) ব্যবসায়ী তাদের পাওনা টাকা আদায় করতে না পারায় বর্তমানে তারা অর্থাভাবে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। শহরের বাড়াইপাড়ার পাইকার ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন জানান, গত বছরের সাত লাখ টাকা মহাজনের ঘরে পড়ে আছে, দেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় লাভের আশায় ফের ধারদেনা করে চামড়া কিনতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া দালালদের কাজ থেকে চামড়া কিনে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ঢাকার বিভিন্ন ট্যানারিতে সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু এবারে আর্থিক সংকটের কারণে বড় বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ছোট ব্যবসায়ী, মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
নীলফামারী শিল্প ও বণিক (চেম্বার অব কমার্স) সমিতির সভাপতি প্রকৌশল এসএম সফিকুল আলম ডাবলু বলেন, এই চামড়া ছোট ব্যবসায়ীসহ চারবার হাতবদল হয়। প্রথমে মৌসুমি ব্যবসায়ী গ্রাম ঘুরে কোরবানিদাতার কাজ থেকে চামড়া কিনেন। দ্বিতীয় ধাপে পাইকাররা নগদ টাকা দিয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের নিকট কেনেন। তৃতীয় ধাপে আড়তদাররা লবণ দিয়ে লাভের আশায় ঘরে কিছুদিন রাখেন। চতুর্থ ধাপে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর চামড়াগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন।
ফলে ট্যানারির মালিকদের লোকসান গুনতে হয় না। তবে শহর কিম্বা গ্রামের পাড়া-মহল্লা ঘুরে চামড়া কিনে লোকসান গুনতে হয়, মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীদের। এ কারণে ট্যানারির মালিকদের কাছে জিম্মি থাকেন মৌসুমি ও পাইকার ব্যবসায়ীরা।
জেকেএস/