প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম
বর্ষার শুরুতেই আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদী। এরইমধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র ভাঙন। গত কয়েক দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশত বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। নদী তীর রক্ষায় প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ঠিকাদারের গাফিলতিতে ভাঙন হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বুধবার সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার আরকান্দি গ্রামে গিয়ে কথা হয় ভিটেহারা সুফিয়া খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আট বার যমুনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নদীপাড়ে ঘর তুলে কোনোমতে বসবাস করছেন তিনি। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই আবারও আগ্রাসী যমুনা কেড়ে নিয়েছে তার শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও। সব হারিয়ে তিনি এখন অসহায়। সুফিয়ার মতো একই অবস্থা যমুনা পাড়ের শত শত পরিবারের।
যমুনায় তীব্র ভাঙন
বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই বাড়ছে যমুনার পানি। সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। একই অবস্থা এনায়েতপুর ও চৌহালি উপজেলারও। সব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে অসহায় মানুষের। নদী তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও ভাঙনের জন্য ঠিকাদারের গাফিলতিকে দুষছেন স্থানীয়রা।
ভাঙন রোধে গাফিলতির অভিযোগ
বর্ষার শুরুতে আবারো ভাঙনের কবলে পড়ার আতংকে রয়েছেন যমুনা পাড়ের বাসিন্দারা। এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণ গ্রামের আশরাফ আলী বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই আমাদের এলাকায় নদী ভাঙনের শুরু হয়েছে। ভাঙনে প্রতিদিন মানুষের ঘর বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছিলো। কিন্তু ঠিকাদাররা জিও ব্যাগ ফেলা বন্ধ রেখেছে।
জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ে বালু সংকট
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওফিট্রেট সিস্টেমের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান হিলটন জানান, বালু সংকটের কারণে ভাঙন রোধে আমরা ঠিক মতো কাজ হচ্ছে না। এই এলাকায় কোনো বালু মহাল না থাকায় আমরা জিও ব্যাগ ডাম্পিং করতে পারছি না।
ভাঙন কবলিত এলাকায় কাজ শুরুর আশ্বাস
যমনার ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত বালুর ব্যবস্থা করে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেয়ার কথা বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, শাহজাদপুরে ও এনায়েতপুরে যে অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে, সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত স্থানে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
২০২০ সালের ২৪ জুলাই সকাল থেকেই তীব্র ভাঙন দেখা দেয় সদর উপজেলার সিমলা ও পাঁচ ঠাকুরি এলাকায়। ভাঙনে মুহূর্তেই চোখের সামনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় শতাধিক বসতবাড়ি। ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়ে সহায় সম্বল নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয় অসহায় মানুষ। ভাঙন রোধে সিমলা ও পাচঁঠাকুরি এলাকায় ২০২১ সালে এলাকায় ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০০ মিটার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এডিএস/