• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, তারা জানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কী বলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম

ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, তারা জানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কী বলতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভারত যথেষ্ট পরিপক্ব, তারা জানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কী বলতে হবে আর কী হবে না।

বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মার্কিন সফর নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য টুইস্ট করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে ভারত কী বলবে তা নিয়ে বাংলাদেশের উকালতি করার কিছু নেই। কিন্তু  পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য খণ্ডিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন - এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগে জয় বাংলা বলেনি, এখন তো বলছে। এটা ভালো কথা।’

জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন,

‘নির্বাচন আসলে অনেকেরই প্রার্থী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নির্বাচন যখন হবে তখন কাকে প্রার্থী করা হবে, কাকে প্রার্থী করা হবে না - এটা আমাদের দলের লক্ষ্য থাকে। শত ফুল ফুটতে দিন না, যে ফুলটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর সে ফুলটিই আমি বেছে নেব।’

যথাসময়ের আগেই নির্বাচন হবে কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করেন, কী এমন পরিস্থিতিতে পড়লাম যে নির্বাচন আগে হতে হবে? নির্বাচন যথাসময়েই হবে সংবিধান অনুযায়ী। আপনারা কি চান না, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকুক?

সংবিধান মেনেই সঠিক সময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় যাবে।

তিনি বলেন, ‘ব্রিকসের প্রস্তুতি পর্ব থেকেই তাদের সঙ্গে আছি। কোন একপক্ষের ওপর নির্ভরশীল না হতেই ব্রিকসে যোগদানের সিদ্ধান্ত। বিকল্প কোনো আর্থিক ব্যবস্থা কেউ নিলে, আমরা তার সঙ্গে আছি। শুধু ডলারের ওপর নির্ভরশীল নয়। যেটা দেশের জন্য কল্যাণকর, সেটাই করবো। যখন যেখানে যেটা দরকার, সেটাই করবো।’

কাতারের কাছ থেকে যেভাবে চেয়েছি, সেভাবেই এলএনজি আমদানির দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি হয়েছে বলেও জানান  প্রধানমন্ত্রী।

ওয়েস্টমিনস্টার মডেলেই নির্বাচন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিএনপিই নষ্ট করেছে। এখন তারাই সেটা ফেরত চাচ্ছে।

গণতন্ত্র প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বলেন, ‘অনেক ত্যাগের মধ্যদিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র আছে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন হোক - এটা আমাদেরও দাবি। আপনারা কি চান না দেশে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকুক।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি কি এবারও দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্টমান্টিন বিক্রির মুচলেকা দিতে ক্ষমতায় আসতে চায়? এটা আমার দ্বারা হবে না। কাউকে দেশ বিক্রি করতে দেবো না।’

তিনি আরও বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সময়ে নির্বাচন বলতে কিছুই ছিল না। মানুষের ভোটের অধিকার বলতে কিছুই ছিল না। মানুষের সব অধিকার এক জায়গায় বন্দি ছিল।
 
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 
নির্বাচন সময়মতোই হবে, সংবিধান অনুযায়ীই  হবে।


সুইজারল্যান্ড সফরে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডির তার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 
রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের (ইউএনএইচআরসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছি এবং রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।

কাতার সফর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
কাতার সফরে গুরুত্ব পায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি। এছাড়া ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২ পরবর্তী সময়ে কর্মহীন হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন কাতারের আমির। চলতি বছর তার বাংলাদেশ সফরের বিষয়েও ইতিবাচক সাড়া দেন তিনি।

কাতারে সাম্প্রতিক দুটি সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

গত ১৩ জুন সকালে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট।

পরদিন ১৪ জুন প্যালেস ডি নেশনসের বৈঠক কক্ষে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বারসেটের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

একই দিন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনস-এ ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট-২০২৩’-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে জেনেভায় ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলের সভাকক্ষে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক (ডিজি) ড. ওকনজো ইওয়েলা। এতে ডব্লিউটিওর ডিজি মৎস্যখাতের ভর্তুকি বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে জানান, তারা এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

এ সময় ডব্লিউটিওর ডিজি আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ সম্মেলনে অংশ নিতে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে কথা বলার সময় এ বিষয় তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান, যাতে এ বিরোধ নিষ্পত্তি সংস্থা সক্রিয় হয়। ডিজি বলেন, ‘এটি ডব্লিউটিওর মূল শক্তি।’

এর আগে, একই স্থানে কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সামিক আল মারি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কাতারের মন্ত্রী বলেন, তার দেশে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার বাংলাদেশি জনশক্তি কাজ করছে। এসব শ্রমিকের কর্মক্ষমতা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট।

সফর শেষে শুক্রবার (১৭ জুন) রাতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


এডিএস/

আর্কাইভ