প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২৩, ০১:৫৪ এএম
মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সন্ত্রাসী দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের দাবিতে শনিবার (১০ জুন) বিকাল ৪টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।
সমাবেশে সংগঠনের উপদেষ্টা ভাস্কর রাশা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সরকারের এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে শক্তিদেরকে ব্যথিত করেছে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হলেও জামায়াতকে আজও পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরে গণহত্যা ও গণধর্ষণে জড়িত জামায়াত বিগত ২০০১ সালে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ছয় শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যকে হত্যা করেছিল। আহত হয়েছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ, ১২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছিল। জামায়াত-শিবিরের সংঘবদ্ধভাবে হামলা, নির্যাতন, লুটতরাজে নিঃস্ব হয়েছিল লক্ষাধিক হিন্দু পরিবার। আর নয় প্রতিবাদ, এবার হবে প্রতিরোধ।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, পেট্রল বোমায় ঝলসানো বাংলাদেশ, বাতাসে মানুষ পোড়া গন্ধ, মানুষ হত্যার বিভৎস উৎসব বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। তাই অচিরেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর-আলশামসদের সন্ত্রাসী দল জামায়াত শিবিরের রাজনীতি আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। স্বাধীন দেশের পবিত্র মাটি ৩০ লাখ শহীদের রক্তে সিক্ত। এর জন্য দায়ী জামায়াতকে দশ বছর পর আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে সরকার চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা ও দুই লাখ নারীকে গণধর্ষণের অপরাধ স্বীকার করে জামায়াত আজও ক্ষমা চায়নি। এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামায়াত-শিবিরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিলে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সংগঠনের সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করে জাতির সামনে অবৈধ সামরিক শাসক জিয়ার মুখোশ উন্মোচনের দাবি জানান। তিনি বলেন, ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবিরের বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র আবার শুরু হয়েছে। এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। কারণ জামাত-শিবির সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রকৃত শত্রু। এরা বাংলাদেশকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
ফিরোজ আহমেদ বলেন, জামায়াতের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড কখনো বরদাশত করবে না মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। ধর্মীয় লেবাসধারী উগ্রবাদীদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দেশবাসীর বিবেকের কাছে প্রশ্ন- জামায়াত-শিবির কি সত্যিই ইসলামের চর্চা করে? এরা প্রকৃতপক্ষে আবু জেহেলের অনুসারী অভিশপ্ত গোষ্ঠী। কারণ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি জামাত-শিবির ইসলাম ধর্মের লেবাস লাগিয়ে প্রতিনিয়ত ইসলাম পরিপন্থী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করে যাচ্ছে। এদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র ও ধর্ম দুটি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। ধর্মকে রাজনীতিতে নিয়ে এলে সেই ধর্ম কলুষিত হয়। ধর্মকে পুঁজি করে ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াত-শিবির ইসলাম ধর্মকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। ভারত, আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলোর সংবিধানে কোথাও রাষ্ট্র ধর্ম উল্লেখ নেই। এমনকি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ইন্দোনেশিয়াতেও রাষ্ট্র ধর্মের কথা উল্লেখ নেই। তাদের সংবিধানেও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি রয়েছে। রাষ্ট্র সকলকে সমান চোখে দেখবে। এটাই ইসলাম শিক্ষা দেয়।
‘একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও গণধর্ষণ জড়িত জামাত-শিবিরকে আইন করে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে’, যোগ করেন তিনি।
এডিএস/