প্রকাশিত: জুন ৭, ২০২৩, ০৪:০৫ এএম
শিল্প এলাকা গাজীপুর। বিভিন্ন রকম ঝামেলা শিল্প এলাকার নিত্য সঙ্গী। গার্মেন্টস সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় শ্রমিক অসন্তোষও স্বাভাবিক ব্যাপার। এমন একটা এলাকায় প্রায় এক বছরের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন মোল্যা নজরুল ইসলাম। তিনি যখন গাজীপুর যান তখন এ এলাকাটি এর ব্যতিক্রম কিছু ছিল না। স্বাভাবিক ঝামেলা তো ছিলই, সে সঙ্গে ছিল যানযট। ঢাকার সঙ্গে বিভিন্ন এলাকার যোগাযোগ গাজীপুরের মাধ্যমে হওয়ায় সেখানে সবসময় বড় ধরণের একটা যানজট লেগে থাকতো। তাছাড়া গাজীপুর রাজনৈতিকভাবে বেশ জটিল এলাকা। সব মিলিয়ে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। কঠিন এ দায়িত্ব পালন শেষে গাজীপুর থেকে বদলি হওয়ার আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সিটিনিউজ ঢাকা ডট কম পাঠকের জন্য সে স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো।
প্রিয় গাজীপুর নগরবাসী,
আসসালামু আলাইকুম ।
কর্ম-জীবনে নতুন নতুন দায়িত্ব নৈমিত্তিক ঘটনা। এটিকে রিলে রেসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যেখানে কিছুটা দৌঁড়ে এসে উত্তরসূরীর হাতে কাঠিটি তুলে দিতে হয়। তারপর দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুনের শুরু হয় আবার দৌড়। চক্রাকারে এভাবেই চলতে থাকে। যেমন সময় এসেছে আমার দায়িত্বের কাঠিটি এবার নতুন কারো হাতে তুলে দেওয়ার, যেভাবে আমি কারো হাত থেকে তুলে নিয়েছিলাম গুরু এই দায়িত্বভার। তবে তার আগে, কিছু স্মৃতি রোমন্থন করতে চাই।
গত ১৩ জুলাই ২০২২ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করি। যোগ দিয়েই নগরবাসীর প্রত্যাশা পূরণে কাজ শুরু করি। স্বল্প সময়ে এবং সীমিত সামর্থ্যে কার্যকরী নানা উদ্যোগের সমন্বয়ে বাস্তবিক অর্থেই এই মহানগরের পুলিশ জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পেরেছে বলে আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি।
গাজীপুরবাসীর গলারকাটা, চিরায়ত যানজটের ভোগান্তিকে আমরা স্বস্তিদায়ক করতে পেরেছি। একই সাথে ফুটপাত দখলমুক্তকরণ, অবৈধ পার্কিং, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে মানুষের কর্মঘন্টা ও জ্বালানি সাশ্রয় করেছি।
নগরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মাদক, চাঁদাবাজ, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধের মাত্রা ও পৌনঃপুনিকতা কমে এসেছিল এ সময়ে। সীমিত জনবল নিয়ে নগরবাসীকে সময়ের সেরা সেবা উপহার দিতে আমাদের আন্তরিকতার কোনো কমতি ছিল না।
আপনাদের সহযোগিতায় বিশ্ব ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। আমাদের বিশ্বাস, এবারের ঈদযাত্রার স্মৃতি গাজীপুরবাসী ও এ রাস্তায় চলাচলরত প্রায় ৩২ জেলার নাগরিকবৃন্দদের জন্য বেশ সুখকর ছিল। একই সঙ্গে তৈরী পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ এ সময়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের নানামুখী তৎপরতায় তা প্রশমিতই ছিল।
শেষবেলায় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পেরেছি, যা গাজীপুর নগরবাসী তথা দেশবাসীর নিকট প্রশংসিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রদান করেছে। আমাদের তৎপরতায় নির্বাচনী পরিবেশ ছিল উৎসবমুখর এবং নির্বাচন চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা পরিলক্ষিত হয় নি। নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় গাজীপুর নগরবাসী মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল আচরণের প্রশংসা করেছেন।
নাতিদীর্ঘ এ পথ চলায় নানা প্রতিকূলতায় পতিত হয়েও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আপনাদের পাশে থেকেছে। সুধী সমাজ, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, সাংবাদিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও জনমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
আগামী দিনেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট পুলিশ বিনির্মাণে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন নেতৃত্ব কাজ করে যাবে বিদায়বেলা এই প্রত্যাশা করছি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সম্মানীত সচিব মহোদয় ও সম্মানীত আইজিপি মহোদয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। নতুন দৌঁড়ের জন্য আমাকে প্রস্তুত হতে হচ্ছে। গাজীপুরের আপামর জনমানুষের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রচেষ্টা আমার সবসময়ই ছিল। নিশ্চয়ই সে চেষ্টা আপনাদের মনে থাকবে। সকলের প্রতি অপার কৃতজ্ঞতা।