• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
আঞ্চলিক সহযোগিতা

ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের কথা বললেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত

প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২৩, ০১:৫০ এএম

ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের কথা বললেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সহযোগিতা বাড়াতে ও বৈচিত্র্য আনতে জাপান, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখার বিষয়ে জোর দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি।

শনিবার (৩ জুন) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে ‘জাপান-বাংলাদেশ সম্পর্ক: ভবিষ্যতের পূর্বাভাস’ শীর্ষক এক সিম্পোজিয়ামে তিনি এমন মন্তব্য করেন। দ্য কসমস ডায়ালগ অ্যাম্বাসাডর্সের অংশ হিসেবে এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করা হয়।

কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা ও দুদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগের ওপরই বেশি আলোকপাত করা হবে।

ত্রিপক্ষীয় প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি একটি নতুন ইস্যু। তবে কারো কারো অনিচ্ছা থাকতে পারে। ভারত-জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যকার সহযোগিতা নিয়ে ভিন্নমত থাকতে পারে। কিন্তু আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত রয়েছি। আমরা আরও অনেক বেশি মতামত ও আইডিয়ার কথা শুনতে চাই। আমি বলতে পারি, আলোচনা সবে শুরু হয়েছে।’

ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি জোর দিতে গিয়ে তিনি আঞ্চলিক সংযোগ ও আঞ্চলিক সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বে (আরসিইপি) যোগ দেয়ার সদিচ্ছা থাকতে হবে বলেও জানান রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের অংশ হিসেবে সহযোগিতার তিনটি খাত শনাক্ত করেছেন তিনি।

ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এ অঞ্চল এবং এর বাইরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এ সহযোগিতা বাড়াতে হবে। পারস্পরিক স্বার্থ সুরক্ষা, আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করতে হবে।

জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার কথা মাথায় নিয়ে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুকে স্বাগত জানিয়েছেন দুই দেশের নেতা।

তবে সুনির্দিষ্ট প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে রাজি হননি তিনি। ইওয়ামা কিমিনোরি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার সময় এখন নয়। ‘আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা সহযোগিতা (ওএসএ) নামের একটি নতুন সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে জাপান। নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীরে নিয়ে যেতে সমমনা দেশগুলোর অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সশস্ত্র বাহিনী যা থেকে লাভবান হতে পারবে।

ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, ফিজি ও বাংলাদেশে এ সংক্রান্ত প্রাথমিক জরিপ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জাপান সফরে যৌথ বিবৃতির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সহযোগিতার সম্ভাব্য উন্নয়নের বিভিন্ন উদ্ধৃতি সেখানে আছে।

বিনিয়োগ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, অনেক নতুন কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু সে জন্য কিছু দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও জটিলতার সুরাহা করতে হবে। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও যোগাযোগের বিভ্রাট রয়েছে। কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ও রয়েছে, যা অস্বীকার করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে দুপক্ষকেই অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন জানিয়ে জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি কেবল বাংলাদেশের জন্যই নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের (রোহিঙ্গা) মর্যাদাপূর্ণভাবে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই হচ্ছে চূড়ান্ত সমাধান।

‘বাস্তুচ্যুত এসব মানুষকে যে দেশ আশ্রয় দিয়েছে, সেই দেশ ও শরণার্থীদের সহায়তা করছে জাপান। এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে তাতে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বাড়বে। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে থাকবে,’ যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূতের এ সংলাপের আয়োজন করে কসমস ফাউন্ডেশন। এতে সভাপতিত্ব করেন ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টোকিও সফরকালে জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক ‘সমন্বিত’ থেকে ‘কৌশলগত’ পর্যায়ে চলে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের আগে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আউটলুক ডকুমেন্ট প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যাতে সবার সমৃদ্ধি অর্জনে অবাধ, মুক্ত, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজিএস) আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমাহাইদ, কলাম লেখক মনজুরুল হক, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার তারিক এ করিম।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ