• ঢাকা সোমবার
    ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১
তথ্যমন্ত্রী বলেছেন

দেশকে মাদকমুক্ত করা সরকারের লক্ষ্য

প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৩, ০১:৩৫ এএম

দেশকে মাদকমুক্ত করা সরকারের লক্ষ্য

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে মাদকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করা সরকারের লক্ষ্য।

বুধবার (৩১ মে) দুপুরে রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)। এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান।’

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য ‘উই নিড ফুড, নট টোব্যাকো’ অনুসারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপাদ্য ‘তামাক নয়, খাদ্য ফলান’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে তামাকের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। আমি সারা জীবন একটিও সিগারেট বা তামাক গ্রহণ করিনি। পৃথিবীতে বহু ক্ষুধার্ত মানুষ আছে। মাদক চাষের চেয়ে তাদের জন্য খাদ্য ফলানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মাদক চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি যদি আমরা খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে খাদ্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে; দেশ, জাতি, সমাজ, বিশ্ব উপকৃত হবে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের তরুণ সমাজের জন্য মাদক অনেক বড় অভিশাপ। তাই সমাজকে মাদক থেকে মুক্ত রাখা দরকার। কোনো পরিবারে যদি কেউ মাদকাসক্ত থাকে সেটি শুধু তাকে নয়, পুরো পরিবারকে ভোগায়। এটি একটি মারাত্মক ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাধি। এটি থেকে সমাজকে আসলেই মুক্ত রাখা দরকার। এ জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন প্রয়োজন।

তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পাশাপাশি পারিবারিক, সামাজিক ও গণমাধ্যমে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে আরও সচেতন করা প্রয়োজন। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজন সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করছেন। বাংলাদেশকে মাদকমুক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করা সরকারের লক্ষ্য।’ সব দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে মাদক নির্মূলে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় মানসের সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে দেশে মোট আবাদযোগ্য জমি রয়েছে ৮৮ লাখ ২১ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে বর্তমানে দেশে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে এবং এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে খাদ্যসংকট তৈরি হতে পারে। তাই এখনই সময় মাদককে জোরালোভাবে নিষিদ্ধ করা।

তামাক পোড়ানোর ফলে বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ বন উজাড় হচ্ছে মন্তব্য করে অরূপরতন বলেন, ‘পার্বত্য এলাকার তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতের কারণে বনভূমি উজাড় হয়েছে। শুধু তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে প্রতিবছর ২৯ লাখ ৩২ হাজার গাছ পোড়ানো হয়। এক একর জমিতে যে পরিমাণ তামাক উৎপন্ন হয়, তা শুকানোর জন্য প্রয়োজন প্রায় ৫ টন কাঠ। এমনকি তামাক চাষে ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক জীববৈচিত্র্য প্রাণী চক্রের ক্ষতিসাধন করছে। তামাক চাষপ্রবণ এলাকায় মানুষের মধ্যে বিশেষত গর্ভবতী নারীদের নানাবিধ স্বাস্থ্যগত সমস্যা, প্রতিবন্ধী, বিকলাঙ্গ সন্তান জন্ম দেয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। তাই সময় থাকতে আমাদের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, তামাক চাষ সারা পৃথিবীর ২.৪ শতাংশ বন উজাড়ের জন্য দায়ী। ২০১৩ সালে ইন্টারন্যাশনাল কোস্টাল ক্লিন আপ বাংলাদেশসহ ১২টি দেশের সাগর থেকে যে বর্জ্য সংগ্রহ করে, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে সিগারেট ফিল্টার।

তিনি আরও বলেন, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে, যা ২০ শতাংশ বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তাই এখনই সময় তামাককে ‘না’ বলা। তামাকমুক্ত সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গড়ে তোলা।

মানস সভাপতি ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ডা. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ নূরুজ্জামান, চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ