• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৩, ০৯:১৫ পিএম

মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

একসময় মুসলমানরা শৌর্য-বীর্য, জ্ঞানবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে, সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার (৩০ মে) গাজীপুরে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ৩৫তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা-গবেষণায় গুরুত্ব দিতে পারলে মুসলিম সম্প্রদায়ের হারানো ঐতিহ্য ফিরবে। ইসলামের সোনালি যুগে বিশ্বসভ্যতা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন, রসায়ন, গণিত, চিকিৎসা, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল শাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানদের অবদান এক গৌরবময় ঐতিহ্যের ইতিহাস গড়ে তুলেছিল। মুসলমানরা শৌর্য-বীর্য, জ্ঞানবিজ্ঞান ও সাহিত্য-সংস্কৃতিতে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। সেই গৌরবময় ঐতিহ্যের অধিকারী মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়ল, তা আমাদের বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, শিগগিরই বাংলাদেশ ন্যানো টেকনোলজি নীতিমালা পাস করবে। সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলেই দেশ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত হবে। আবার স্মার্ট বাংলাদেশ বানাতে গিয়ে যেন মানবিকতা হারিয়ে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে কলহ, একে অপরের প্রতি সৌহার্দ এবং শ্রদ্ধার অভাব, জ্ঞানবিজ্ঞান চর্চায় পিছিয়ে পড়াসহ নানা কারণে আজ মুসলমানরা পিছিয়ে পড়েছে। এ সম্মান ফিরে পেতে মুসলমানদের আবার শিক্ষা-গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন করতে হবে। আজ মুসলিমদের দখলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সম্পদ রয়েছে। এই সম্পদকে বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে আমাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, আজকের স্নাতকরা আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক এবং বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য ছাত্রীনিবাস নির্মাণে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান প্রদান করা হয়েছে। আমি আজ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী স্নাতকের উপস্থিতি দেখে অত্যন্ত আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি, নারী স্নাতকরা তাদের লব্ধ জ্ঞানের দ্বারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আমি আরও নিশ্চিত করছি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতেও আইইউটির বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে সহায়তা ও সমর্থন অব্যাহত রাখবে। আমি মনে করি, একটি বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইইউটির স্বীকৃতিকে নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে মুসলিম উম্মাহর সক্ষমতা প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা সম্ভব।’


এর আগে সমাবর্তন মঞ্চ থেকেই আইইউটি ক্যাম্পাসে নবনির্মিত ছাত্রী হল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।

মুসলিম বিশ্বের স্বার্থ সুরক্ষায় কাজ করা, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা বা ওআইসি পরিচালিত দেশের অন্যতম বিদেশি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরে অবস্থিত। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি বা আইইউটি নামের এ প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে মূলত প্রকৌশল বিদ্যায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর শিক্ষার্থীরা। সকালে প্রতিষ্ঠানটির ৩৫তম সমাবর্তন উপলক্ষে গাজীপুরে আইইউটি ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির চ্যান্সেলর ও বাংলাদেশ সফররত ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ব্রাহিম তাহা। এ বছর ১৪টি দেশের ৫৫০ জন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সমাবর্তনে অংশ নেন। যার মধ্যে রেকর্ড নম্বরপ্রাপ্ত, নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখা বিভিন্ন অনুষদের গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
 
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গর্বিত স্বাগতিক দেশ এবং এর পরিচালনায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে আসছে। ভবিষ্যতেও আমরা এই সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সমাবর্তনে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সফররত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) মহাসচিব ও আইইউটির চ্যান্সেলর হিসেইন ব্রাহিম তহা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সমাবর্তনে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।


এডিএস/

আর্কাইভ