• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় রাতের আঁধারে দিনমজুরের জমি দখল

প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় রাতের আঁধারে দিনমজুরের জমি দখল

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় রাতের আঁধারে দিনমজুরের জমি দখল করে ধর্মীয় স্থাপনা তোলার অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে একই জমিতে একটি ঘর ও একটি টিনের চাল তোলা হয়েছে। পাশেই একটি লটকন গাছের নিচে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই ঘরে রাতে ও মাচায় দিনে অবস্থান করছেন জমি দখলকারীরা।

ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া বিউটিপাড়া এলাকায়।

জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাধ্যমের কাছে ছুটে গিয়েও এ ঘটনার কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী আব্দুল আউয়াল (৫১)। প্রতিকার পেতে ইউপি চেয়ারম্যান ও বোদা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু লোকজনের উসকানিতে পূর্বপুরুষের বিক্রি করা জমি আবারও দখলে নিয়েছেন স্থানীয় রাজেন্দ্র রায় (৫২), তার ছোট ভাই সুবাস চন্দ্র রায়সহ (৪৫) তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে জমি দখলকারীরা বলছেন, ওই জমির সঠিক কাগজপত্র দেখাতে পারলে আব্দুল আউয়ালকে জমি ছেড়ে দেবেন তারা।

অন্যদিকে আব্দুল আউয়ালের অভিযোগ, গায়ের জোরে ও ধর্মকে ব্যবহার করে স্থানীয় কিছু মানুষের উসকানিতে তার কষ্টের টাকায় কেনা জমিতে রাতের আঁধারে একটি ধর্মীয় স্থাপনা ও ঘর তোলা হয়েছে। দখলকারীদের স্থানীয় ইউপি সদস্যের ডাকা সালিশে ও থানায় ডাকা সালিশে কখনোই হাজির করা যায়নি।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় রাতের আঁধারে জমি দখল করে নির্মাণ করা ঘর।


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া বিউটিপাড়া এলাকার অসহায় দিনমজুর আব্দুল আউয়াল প্রতিবেশী আইজুল ইসলামের কাছ থেকে ২০২২ সালে কেনেন ২২ শতক জমি। জমি কেনার পর চাষাবাদ করতে যেতেই বাধা দেন রাজেন্দ্র রায়, তার ছোট ভাই সুবাস চন্দ্র রায়সহ তাদের পরিবারের সদস্যরা। পরে এনিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও বোদা থানায় সালিশ ডাকা হলেও প্রতিবারই নানা অজুহাতে সালিশে অনুপস্থিত ছিলেন রাজেন্দ্র রায়সহ তাদের পরিবারের লোকজন। ফলে দীর্ঘদিনেও হয়নি জমি নিয়ে কোনো ফয়সালা। এরই মাঝে শনিবার (২০ মে) রাতের আঁধারে একটি ধর্মীয় স্থাপনা ও ঘর তোলেন রাজেন্দ্ররা। এর পর সেখানেই বিদ্যুৎ সংযোগ টেনে অস্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন তারা।

ভুক্তভোগী আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি কষ্টের টাকায় ২২ শতক জমি কিনেছি প্রতিবেশী আইজুলের কাছ থেকে। তিনি ১০ থেকে ১২ বছর আগে রাজেন্দ্রের কাকা শিবেন রায়, পার্বতী রায় ও অশুনি রায়ের কাছ থেকে কিনেছেন। এতদিন তিনি (আইজুল) ফসল আবাদ করছিলেন। আমি কেনার পরই হঠাৎ তারা আমার জমি দখলে নিলো। তা-ও আবার ধর্মকে ব্যবহার করে। এখন আমিই আমার কেনা জমিতে যেতে পারছি না। অথচ আইজুলের কাছে জমি থাকাকালীন তারা জমি দখল করতে আসেনি। স্থানীয় কেদার নামে এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন তাদের ইন্ধন দিয়েছে জমি দখল করতে। এখন জমি দখলে রাখতেও তাদের নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আমি বিচার চেয়ে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু ন্যায্যবিচার পাচ্ছি না। আমি আমার জমি ফেরত চাই। এর একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

অভিযুক্ত রাজেন্দ্র রায় বলেন, ‘এই জমির মূল মালিক আমার দাদি শরমেশ্বরী রানী। তার কিছু অংশ আমার তিন কাকা পাওয়ার পর বিক্রি করে দেয়। কিন্তু আমার বাবার অংশ তো বিক্রি হয়নি। আমরা যখন জানতে পারি যে এই জমি আমাদের, তখন থেকে আমরা দাবি শুরু করি জমির ব্যাপারে। আমরা ২০০৮ সালে জমি জরিপে অভিযোগ দিয়েছিলাম। তখন থেকে জমিটা পাচ্ছিলাম না। এবার আমরা দখলে নিয়েছি। এটা আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটা। যদি তারা সঠিক কাগজ দেখাতে পারে, তাহলে আমরা জমি ছেড়ে দেব।’

বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি সুরাহা করতে স্থানীয় ইউপি সদস্য কাব্যভূষণ রায়কে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছি। ওই কমিটি কয়েকবার সালিশ ডেকেছে। কিন্তু বিবাদী পক্ষ হাজির হয়নি। তবে কমিটি যদি আমাকে প্রতিবেদন দেয় যে তারা বিষয়টি সুরাহা করতে পারল না, তখন আমি বিষয়টি দেখব। এদিকে এর মাঝে একদিন শুনি জমি দখলে নিতে নাকি রাজেন্দ্ররা ধর্মীয় স্থাপনা ও ঘর তুলেছে। জমি পাবে নাকি পাবে না সেটা কাগজপত্র দেখে ঠিক করা হবে। কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করে জমি দখল করা এটা রাজেন্দ্ররা ঠিক করেনি।’

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় রায় বলেন, ‘আমাদের কাছে আউয়াল নামে এক ব্যক্তি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে গিয়েছিলেন। সরেজমিন দেখেছেন। তবে দুই পক্ষই আমাদের আশ্বস্ত করেছিল যে তারা জমিতে যাবে না। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। আসলে জমি নিয়ে তো আমরা কোনো বিচার করতে পারি না। এটা ইউপি চেয়ারম্যান বা আদালতের বিষয়। আমরা দেখছি যেন আইনশৃঙ্খলা অবনতি না হয়।’


এডিএস/

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ