প্রকাশিত: মে ২৯, ২০২৩, ০৭:০৩ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বে শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অপশক্তিগুলোর নতুন নতুন হুমকি। ফলে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সোমবার (২৯ মে) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩’ উদযাপন এবং বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শাহাদত বরণকারী ও আহত সদস্যগণের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যাতে বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপজ্জনক অঞ্চলসমূহে সৃষ্ট জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে সেজন্য আমরা তাদের সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বদা প্রস্তুত রেখেছি। মিশন এলাকার পরিবেশ, আবহাওয়া ও ভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামাদিসহ পোশাক ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। আমরা বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টগুলো অত্যাধুনিক মাইন-রেজিস্ট্যান্ট অ্যাম্বুশ প্রটেক্টেড যানবাহন এবং শান্তিরক্ষীদের যোগাযোগের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন করেছি। আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন ও প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া যা আমরা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখবো।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৩’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গকারী সব শান্তিরক্ষীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সব আহত শান্তিরক্ষীসহ বর্তমানে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত শান্তিরক্ষীর প্রতি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেবল বাঙালি জাতিরই নন, তিনি ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের মুক্তির বার্তাবাহক ও শান্তির দূত। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় প্রদত্ত তার প্রথম ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার। এই শান্তির মধ্যে সারা বিশ্বের নর-নারীর গভীর আশা-আকাঙ্ক্ষা মূর্ত হয়ে রয়েছে। ন্যায় নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তি কখনও স্থায়ী হতে পারে না”।
তিনি বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা রোধ, সাম্য-মৈত্রী, গণতন্ত্র রক্ষা এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ‘জুলিও-কুরি শান্তি পদক’-এ ভূষিত করে। তিনি সেই পদক উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের এবং বীর সেনানীদের।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে পৌঁছে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা নয়’ -এটাই হবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির মূলভিত্তি।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ব্লু হেলমেট পরিবারের সদস্য হয়। সর্বপ্রথম ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যোগ দেয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৯ বাংলাদেশ পুলিশ এবং ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ নৌ ও বিমান বাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হয়। গত ৩৫ বছর ধরে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে বাংলাদেশ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে কাজ করে চলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর চৌকস, পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের অবদান ও আত্মত্যাগ। আমরা আজ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৫ বছর উদযাপন করছি। অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের এই শুভক্ষণে আমি জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীসহ সব শান্তিরক্ষীদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
জেকেএস/