প্রকাশিত: মে ২২, ২০২৩, ০১:১৫ এএম
চলতি বছর নির্বাচনী বছর। ধারণা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগে দেশের ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি যেমন দলগুলো শুরু করেছে তেমনি নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অর্থাৎ নির্বাচনী রোডম্যাপে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনে বর্তমান সরকারের অধীনে বিএনপির না যাওয়ার ঘোষণা, সাথে প্রতিহতের ডাকে ব্যাপক নাশকতা হতে পারে এমন আশঙ্কা পুলিশের। আর তাই এখন থেকেই পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারে এমন দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের পদায়ন করছে। পাশাপাশি পদোন্নতিও দেয়া হচ্ছে।
গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, রাজধানীকে টার্গেট করে বিএনপি - জামায়াত নির্বাচন প্রতিহতের নামে ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারাও এমন হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে রাজধানী কেন্দ্রিক চৌকস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদায়ন হচ্ছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, আমরা যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত। দেশে কেউ অরাজকতা করলে পুলিশ বসে থাকবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরের শেষের দিকে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। আর আগামি বছরের জানুয়ারির যে কোন দিন অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র ৬/৭ মাস বাকি। নির্বাচন কমিশন সেইভাবেই তাদের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছেন। বিএনপি জামায়াতসহ তাদের জোট বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। এমনকি নির্বাচনও হতে দেবেনা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বর্তমান সময়ে বিএনপির সভা সমাবেশ থেকে এমন হুমকি প্রতিনিয়তও দেয়া হচ্ছে। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নিয়ে তারা উত্তাপ ছড়ায়। এমনকি ওইদিন থেকে খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে, দেশে আসবে তারেক রহমান এমনও ঘোষণা দিয়েছিল। ১০ ডিসেম্বরের আগে বিভাগীয় শহরের সমাবেশের ন্যায় নয়াপল্টনের রাস্তা দখল করে খিচুড়ি খাওয়ারও আয়োজন করে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিএনপি নেতাদের রাস্তা সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলে তারা পুলিশের ওপর আক্রমন করে। এমনকি একের পর এক ককটেল হামলা চালায় পুলিশের ওপর। পরে পুলিশ অ্যাকশনে গিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এমনকি ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে যে কোন মূল্যে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েও তা করতে পারেনি বিএনপি। পুলিশ সতর্কবস্থানে থেকে নয়াপল্টনের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। ওই সময়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করায় সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে ভূয়সী প্রশংসাও পায়।
এদিকে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতও বসে নেই। তারাও নানা সুযোগ খুঁজছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের নামে তারা রাজধানীর মগবাজারে পুলিশের ওপর নজিরবিহীন হামলা করে। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গোপন বৈঠক করছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, নাশকতা চালাতেই মাঠ গোছাচ্ছে জামায়াত শিবির। এ কারণে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মীদের চাঙ্গা করতে মিটিং করে যাচ্ছে।
পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট বলছে, বিএনপি জামায়াত নির্বাচন প্রতিহতের নামে ব্যাপক নাশকতা চালাতে পারে। বিশেষ করে জুনের দিকে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতা চালাতে পারে।
সূত্র জানায়, গত ১০ ডিসেম্বর তারা সহিংসতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশের শক্ত মনোভাবের কারণে সেই অবস্থা করতে পারেনি। পুলিশের এই মনোভাব ধরে রেখে যে কোন নাশকতা শক্ত হাতে দমন করতে পারে এমন কর্মকর্তাদের রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পদায়ন করা হচ্ছে। ডিআইজি থেকে শুরু করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা প্রায় শেষের পর্যায়ে। এছাড়াও কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতিও দেয়া হচ্ছে।
পুলিশের সূত্র বলছে, এখন থেকেই পুলিশ সেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। যেহেতু রাজধানী কেন্দ্রিক টার্গেট বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই কারণে রাজধানীতে দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যে পদায়ন শুরু হয়েছে। এছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগী শহর ও জেলা শহরের পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলি করে নতুন কর্মকর্তার পদায়ন দেয়া হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের পদায়ন এবং পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে।
জানা যায়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পেদান্নতি দেয়া হয় ২৮ কর্মকর্তাকে। ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি পদমর্যাদার ৭ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন রেঞ্জ ডিআইজি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়। একই দিন অতিরিক্ত আইজিপি পদে ৭ কর্মকর্তারও পদায়ন করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২৭ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন জেলায় পদায়ন করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে উপ-পুলিশ কমিশনার ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ৪ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়। একই দিন সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে ৭ কর্মকর্তাকেও পদায়ন করা হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও সহকারী কমিশনার পদে ৩ কর্মকর্তার পদায়ন করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এসআই থেকে পরিদর্শক পদে ৩৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। গত ২ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ১৪ কর্মকর্তার নতুন পদায়ন করা হয়। গত ৬ মার্চ ২৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে পদায়ন করা হয়েছে। একই দিন ডিএমপিতে ৩ উপ-পুলিশ কমিশনার কর্মকর্তার পদায়ন করার পাশাপাশি ৮ জন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনা কে পদায়ন করা হয়।
জানা যায়, সহকারী পুলিশ সুপার থেকে ডিআইজি পর্যন্ত অন্তত দেড়শতাধিক কর্মকর্তাকে নতুন করে পদায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও রাজধানীর ৫০ থানার মধ্যে অন্তত ৩০ থানায় নতুন করে অফিসার্স ইনচার্জ পদায়ন করা হয়েছে। একইভাবে দেশের বিভিন্ন জেলার অন্তত ৭০ শতাংশ থানাগুলোতে নতুন ওসির পদায়ন করা হয়েছে।
পুলিশের একটি সূত্র বলছে, নির্বাচনকালীন সময়ে সহিংসতা রোধে দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের বেছে বেছে পদায়ন করা হচ্ছে। পরিস্থিতি যেন কোনভাবেই নিয়ন্ত্রনের বাইরে না যায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হচ্ছে।
সদ্য পদায়নকৃত সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বলেন, পুলিশ সবসময় নাশকতা, সহিংসতা রোধে প্রস্তুত থাকে। চলতি বছর যেহেতু নির্বাচনের বছর সেহেতু আরো বেশি সতর্ক। হয়তো সেই সতর্ক থেকেই নতুন নতুন এলাকায় নতুন কর্মকর্তা পদায়ন করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা যেকোন ধরনের নাশকতা, সহিংসতা উগ্রবাদ প্রতিহতে সর্বদা প্রস্তুত। পুলিশের সকল কর্মকর্তাই দক্ষ। তারা দক্ষতার পরিচয় দিয়েই পুলিশ বাহিনীতে কাজ করে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু চলতি বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেহেতু আমরা আরো বেশি সতর্ক। কেউ কোন ধরনের সহিংসতা করার চেস্টা করলে আমরা জনগণের জানমাল ও সরকারী সম্পদ রক্ষার্থে কঠোর পদক্ষেপ নেব।