• ঢাকা বৃহস্পতিবার
    ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

ভারত-ভিয়েতনাম কোথাও নেই, সরকার আর কত জ্বালানিতে ভর্তুকি দেবে: প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩, ০৩:৫৭ এএম

ভারত-ভিয়েতনাম কোথাও নেই, সরকার আর কত জ্বালানিতে ভর্তুকি দেবে: প্রতিমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভবিষ্যতে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ পেতে অর্থনৈতিক অঞ্চল বা পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব অঞ্চলে জ্বালানি সরবরাহ করবে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ দিতে হলে এর দামও ওই রকম হতে হবে। সবাইকে এখন জ্বালানির দক্ষ ব্যবহারে জোর দিতে হবে। দাম কমানো নয়, দক্ষ ব্যবহারই শিল্পের খরচ সাশ্রয় করতে পারে। ভারত, ভিয়েতনাম কোথাও জ্বালানি পণ্যে ভর্তুকি নেই। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের কথা ভেবে সরকার দিচ্ছে। কিন্তু সরকার আর কত দিন ভর্তুকি দেবে?

রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার ভবনে ‘জ্বালানি নিরাপত্তা : ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা’ বিষয়ক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) শনিবার এ সংলাপের আয়োজন করে। ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার সামীর সাত্তারের সঞ্চালনায় সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

নসরুল হামিদ বলেন, চাহিদার তুলনায় প্রতিদিন ৫০০-৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি আছে। এ কারণে রেশনিং করতে হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে আরও এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি গ্যাস সরবরাহ করলেও সংকটের সমাধান হবে না। কারণ অপরিকল্পিত শিল্পায়ন। আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজারে মাটির নিচে মাকড়শার জালের মতো পাইপলাইন ছড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকে অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া হচ্ছে। অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিচারবিশ্লেষণ না করেই অনেকে স্থলভাগে গ্যাসকূপ খনন ও গভীর সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান করার পরামর্শ দেন। সেটা আদৌ কার্যকর কিনা বিবেচনায় নেন না। একটি গ্যাসকূপ খনন করতে ৬-৮ মাস লাগে, ৯ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। তারপরও গ্যাস পাওয়া যাবে কিনা, নিশ্চয়তা থাকে না। গভীর সমুদ্রে গ্যাস ব্লক অনুসন্ধানে ৮-১০ বছর লাগে। ব্লক পেলেও সেই গ্যাস পাইপলাইনে স্থলভাগে আনার খরচও বিবেচ্য বিষয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, পরিকল্পিত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প স্থানান্তর করতে চান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিল্প স্থাপনে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রস্তুত নয়। মীরসরাইয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও শ্রমিক প্রাপ্যতা পেতে আরও ৫ বছর সময় লাগবে। এনবিআরকে বসে বসে রাজস্ব আদায় বন্ধ করতে হবে। নীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তা না হলে উদ্যোক্তাদের আস্থা অর্জন করা যাবে না।

নির্ধারিত আলোচনায় ফরেন ইনভেস্টেটর চেম্বারের (এফআইসিসিআই) সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, জ্বালানির দাম নির্ধারণে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। পাশাপাশি সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সার আমদানির চুক্তি করা যায়। কারণ অনেক দেশে কম দামে সার পাওয়া যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ববিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল বলেন, ভূগর্ভে গ্যাস আছে কি নেই, তা নিয়ে কূপ খননে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। কারণ একাধিক বিদেশি সংস্থার জরিপে ভূগর্ভে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গ্যাস চুরি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। একদিকে লাইন কাটা হয়, অন্যদিক দিয়ে লাইন লাগানো হয়। এটা রাজনৈতিক কারণেও হয়ে থাকে। সোলার প্যানেল, ইনভারটার আমদানিতে শুল্ক হার অনেক বেশি থাকায় উদ্যোক্তারা তা আমদানি করছেন না। গ্যাস সংযোগ নেওয়ার সময় সিকিউরিটি ডিপোজিট নেওয়া হয়। এখন বকেয়া বিলের পরিমাণ কম থাকায় ডিপোজিট নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালে আরেকটি ভাসমান স্টোরেজ ইউনিট যুক্ত হবে, তখন সংকট কিছুটা কাটবে। অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়েছে। এ কারণে যারা ঠিকঠাক বিল পরিশোধ করছেন, তাদের গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে শিল্পে গ্যাস সংযোগ দিতে চাই। কিন্তু পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় সংযোগ বৃদ্ধি করব।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প স্থানান্তর করতে বলেছি। সেখানে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ থাকবে। যদি দিতে না পারি, তাহলে বিপণন কোম্পানিগুলো জরিমানা দেবে। এজন্য দরকার হলে নীতি পরিবর্তন করব। আন্তর্জাতিক দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাসে দেশে জ্বালানির দাম নির্ধারণ করা হবে। এখন বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের দাম সমন্বয়ে নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। ভর্তুকি কমাতে বাজারমূল্যে জ্বালানি বিক্রি করা হবে।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ