প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম
রাস্তার মাঝখানে চেয়ার। এক পাশে তিন লাইন করে সারি সারি সিএনজি দাঁড়ানো। কোন সিএনজির পর কোনটা যাবে চেয়ারে বসা ব্যক্তি তা ঠিক করে দিচ্ছেন। আর সিএনজির কারণে পেছনের গাড়িগুলো আটকে আছে। সিএনজি সাইড দিলে আটকে থাকা গাড়ি যায় নতুবা অপেক্ষা করতে হয় কখন সিএনজি সাইড দেবে?
রাজধানীর অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতীক হাতিরঝিলের রামপুরা ইউলুপের নিচের প্রতিদিনের চিত্র এটি। রাস্তা দখল করে অবৈধ সিএনজির অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে রামপুরা থেকে কাওরানবাজারে যাত্রী আনা নেয়া করছে। অথচ রামপুরা থেকে হাতিরঝিলে প্রবেশ করতে এ পথ ব্যবহার করে প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য যানবাহন। এ অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে প্রতিদিন এখানে জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। খোদ ট্রাফিক পুলিশের সামনে এটি হলেও কার্যত কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কারও।
ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্তি উপ-কমিশনার জাহাঙ্গির আলম বলেন, আমি বিষয়টা জানি না। আমি খোঁজ নিচ্ছি। রাস্তার ওপর কোনোভাবেই স্ট্যান্ড করা যাবে না। আমরা ব্যবস্থা নেব।
সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুরা মোল্লা টাওয়ারের বাম পাশে দিয়ে হাতিরঝিল প্রবেশের রাস্তা। সামনে একটু এগুলেই সারি সারি সিএনজি, দুই বা তিন লাইনও করে রাখা। আরও একটু সামনে আসলে হিন্দুধর্মলম্বীদের মন্দির। আর এখানেই বড় জটলা। জটলা হচ্ছে সিএনজি ড্রাইভারদের। সেখানে দেখা মিলবে রাস্তার মধ্যেই চেয়ারে বসা ব্যক্তির। রাস্তার মাঝখানে বসে তিনি ঠিক করে দিচ্ছেন কোন সিএনজি কখন যাবে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে মনে হতে পারে এ যেন স্থায়ী কোন স্ট্যান্ড। অথচ এখানে কোন গাড়ি দাড়ানোর কথা না। দুই তিন লাইন করে সাজানো সিএনজির কারণে এ রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করা গাড়িগুলো মাঝে মধ্যেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। সিএনজি রাখার কারণে অন্যগাড়িগুলো ঠিকমত যেতে পারে না। এটি নিয়ে কথা বলতে গেলে তাদের রোষানালে পড়তে হয়। অনেক সময় প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভাররা তাদের হাতে নাজেহাল হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিএনজিগুলোর রাজধানীতে প্রবেশের কোনো অনুমতিই নেই। অর্থাৎ কোনো সিএনজি গাজিপুর, কোনটি নারায়ণগঞ্জ আবার কোনটি ঢাকা জেলার সিএনজি। এদের নম্বর গাজিপুর থ, নারায়নগঞ্জ থ এবং ঢাকা থ। রাজধানীতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সিএনজিগুলোর নম্বর অবশ্যই ঢাকা মেট্রো থ হতে হবে। নতুবা সেগুলো অবৈধ হিসেবে ট্রাফিক সার্জেন্টরা আটক করতে পারবেন।
দেখা যায়, রাজধানীতে প্রবেশ নিষিদ্ধ শত শত সিএনজি এখানে দাঁড়ানো কিংবা চলাচল করলেও অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করে না ট্রাফিক পুলিশ। উল্টো অবৈধ সিএনজিগুলো সঠিকভাবে চলাচলের ব্যবস্থা করে দেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, অবৈধ হলেও হাতিরঝিলে চলাচলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগ।
তাদের অভিযোগ, শুধু সিএনজিই নয়, বহু পুরাতন লস্কর ঝক্কর মাইক্রোও চলাচলের ব্যবস্থা করেছে ট্রাফিক বিভাগ। এই গাড়িগুলো পুরাতন হওয়ার কারণে গ্যাসের সিলিন্ডারগুলোর টেম্পারেমেন্ট পার হয়ে গেছে। যে কোনো মুহুর্তে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও গাড়িগুলো মাঝ পথে গিয়ে মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যায়। সেই সময় যাত্রীদের তারা কাওরানবাজার না পৌঁছে দিয়ে মাঝপথেই নামিয়ে দেয়। প্রতিদিনই এ ঘটনা ঘটছে।
হাতিরঝিলে চলাচলকারী প্রাইভেটকার চালক আব্দুল ওহাব বলেন, তিনি একবার সিএনজির কারণে আটকে ছিলেন। সেই সময় সিএনজি সরানোর কথা বলতেই চালকরা তাকে নাজেহাল করেছে। তিনি বলেন, এরা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এতে করে এরা জ্যাম বাধালেই কিছুই বলা যায় না।
ওহাবের প্রশ্ন ট্রাফিক পুলিশের সামনেই কেমনে অবৈধ স্ট্যান্ড চলে আবার যে সিএনজিগুলো তারা চালায় সেগুলোও অবৈধ। সবই টাকার খেলা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রিপন নামের আরেক প্রাইভেট কার চালক বলেন, এখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের ভুগতে হয়। হাতিরঝিলের ভেতরে কোথাও স্ট্যান্ড নাই। কিন্তু এখানে আছে। তিনি বলেন, এই অবৈধ স্ট্যান্ডের কাছে আবার ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চায়।
তিনি অভিযোগ করেন, একদিন আমি ট্রাফিক পুলিশকে বলেছিলাম এ অবৈধ স্ট্যান্ডের ব্যাপারে তখন আমারে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। বলেছিল এরপর যতদিন তোরে পাবো মামলা দেব। ভয়ে পরে আমি সেখান থেকে কোন কথা না বলে চলে যাই।
আহমেদ হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, হাতিরঝিলের রাস্তায় কেন এ ধরনের স্ট্যান্ড থাকবে। এ শক্তি সাহস কারা দিলো। কারা এটা নিয়ন্ত্রণ করছে। ট্রাফিক পুলিশের সামনেই তো এগুলো হচ্ছে। পুলিশ যদি তাদের শক্তি সাহস না দেবে তাহলে এটি করার ক্ষমতা তাদের নাই। তিনি বলেন, রাস্তার মধ্যে চেয়ারে বসে তারা এমনভাবেই সিরিয়াল করছে যেন এটি টার্মিনাল। এগুলোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা আরেক ব্যক্তি আবুল হাসান বলেন, খুবই জঘন্য এ কাজ। হাতিরঝিল আমাদের গর্ব। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এখানে এমনতিইে ঘুরতে আসে। এ কারণে এখানে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ডিউটিও করে। অথচ ট্রাফিক পুলিশ তাদের অবৈধ আয় ইনকামের জন্য অবৈধ স্ট্যান্ড করেছে। আবার এ অবৈধ স্ট্যান্ডে যে সিএনজিগুলো এনেছে সেগুলোও অবৈধ। অর্থ্যাৎ তারা এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ করেছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে কেন আসছে না সেটি বোধগম্য নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সার্বিক বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তিনি পদক্ষেপ নেবেন।