• ঢাকা রবিবার
    ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

অভিজাত হোটেলে কৌশলে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: মে ১৯, ২০২৩, ০৩:০০ এএম

অভিজাত হোটেলে কৌশলে  সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র

ইমরান আলী, ঢাকা

রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোতে সরকারবিরোধী গোপন বৈঠক করছে একটি দল ও তাদের মিত্ররা। কঠোর গোপনীয়তায় দলীয় এসব মিটিং করা হচ্ছে ছাত্র ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নাম ব্যবহার করে। কৌশল হিসেবে তারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নাম এবং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিভাগ বা সাবেক ছাত্রদের সম্মিলনের নামেই এসব গোপন বৈঠক করছে।

গোপন বৈঠক থেকে দলীয় সব নির্দেশনা যাচ্ছে দলের বিভিন্ন স্তরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতেই এ কৌশল বেছে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত ঈদুল ফিতরের পর রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে অন্তত অর্ধশতাধিক এমন গোপন বৈঠক হয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি রাজধানীর সংশ্লিষ্ট সব থানাকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 
 
গত মাসে রাজধানীর বনানী ক্লাবে সামাজিক অনুষ্ঠানের আড়ালে গোপন বৈঠক করার সময় একটি বড় দলের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার হয়।  

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এ্যান্ড অপস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাকে আরো সজাগ থাকার ব্যাপারে নির্দেশনা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দলটির কেন্দ্রিয় নেতা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসব গোপন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন। দলীয় বিভিন্ন গোপন নির্দেশনাগুলো এসব বৈঠকে আলোচনা শেষে করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে। ঈদের পর রাজধানীর খিলগাঁও, গুলশান-১ ও ২, বনানী, মিরপুর, মগবাজার, বেইলী রোড, মিরপুর এবং উত্তরার কয়েকটি দামি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ধরনের অন্তত অর্ধশত বৈঠক। 
এসব বৈঠক করার ক্ষেত্রে হোটেল কর্তৃপক্ষকে পূর্বে থেকে কোনো কিছুই অবহিত করা হচ্ছে না। এমনকি তারা জানেই না যে এ ধরনের মিটিং হচ্ছে কিংবা হয়েছে।

জানা যায়, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বিএফসি হোটেলে গত ২৫ এপ্রিল এমন একটি গোপন বৈঠক হয়েছে বলে ওই এলাকার স্থানীয় সূত্রে নিশ্চিত করেছে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে হোটেলের এক কর্মচারি বলেন, ওই দিন লোকজনের ভিড় ছিল। তবে কারা এসেছিল তারা কোন দল করে এটা বলতে পারবো না। চলতি মে মাসের শুরুর দিকে গুলশানের ওয়েস্টিন, বনানীর শেরাটন, সেরিনা হোটেলে বিএনপির মিটিং করার সত্যতা পাওয়া যায়। এগুলো ছাড়াও বনানী স্টার কাবাবেও একটি দলের গোপন মিটিং হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সূত্র বলছে, চলতি বছর নির্বাচনী বছর। বছরের ৫ মাস অতিবাহিত হচ্ছে। তত্বাবাধায়ক সরকার ছাড়া বড় দল বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এই দাবিতে অনড় থেকে তারা আন্দোলন করে আসছে। তাদের এই আন্দোলন সরকারের ওপর তেমন প্রভাব ফেলছে না। এদিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার ব্যাপারে এখনও সংকল্পবদ্ধ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এসব গোপন বৈঠক সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নাশকতার নীলনকশা কি না তা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

সূত্র বলছে, তত্বাবাধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি যে কোনো সময় গত ২০১২-১৪ এর মতই তাদের মিত্রদের নিয়ে সহিংস আন্দোলনে যাবে। আর এ আন্দোলনকে চাঙ্গা করতেই মধ্যম সারির নেতাদের দিয়ে হয়তো মাঠ গোছানোর কাজ করছে অতি গোপনে। আর এ কাজটি করতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বেছে নেয়া হয়েছে রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলো। এসব হোটেলে সন্ধ্যার পর থেকে রাত অবধি চলছে গোপন বৈঠক। বৈঠকে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা বের হওয়ার সময়ও কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন। সবাই একসঙ্গে বের না হয়ে পৃথক পৃথক ভাবে ২/৩ জন করে বের হন। আর বৈঠকে অংশ নেন ২০/২৫ জন নেতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ মার্চ রাতে বনানী ক্লাবে গোপন বৈঠকের সময় ৫৩ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। 
ডিবি সূত্র জানায়, রাতের বেলা একসঙ্গে মিলিত হয়ে বনানী ক্লাবে গোপন মিটিং করছিল তারা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, তারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ রয়েছেন। পুরো রাজধানীজুড়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। বড় বড় হোটেলগুলোতে সাদা পোশাকে পুলিশ উপস্থিত থাকে। বর্তমানে সময়ের প্রেক্ষিতে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 


ডিএমপির কয়েকটি থানার কর্মকর্তারা জানান, এ বিষয়গুলো নিয়ে ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক থানা এলাকায় হোটেলগুলোকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি হোটেলগুলোতে যদি অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে তবে পূর্বে তা পুলিশকে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা পালন করতে হয়। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াচ্ছি।

গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে আমরা তৎপর। আমরা বনানী ক্লাব থেকে গোপন মিটিং করার সময় অর্ধশতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করেছি। নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের খবর পেলে অভিযান চালাবো।


এডিএস/

আর্কাইভ