প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৩তম ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রায় ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন এ দিন।
১৯৮১ সালের ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দলের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফেরার পরদিনই ১৮ মে শেখ হাসিনা যান ধানমন্ডির বাড়িতে। তবে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে ৩২ নম্বরের মূল ফটকের সামনে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেন এবং মিলাদ মাহফিল করেন। ঐ দিন তিনি আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘যে বাড়িতে আমি বড় হয়েছি, যে বাড়িতে আমার পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, এ কেমন বিচার? একদিন নিশ্চয়ই এসব অন্যায়ের বিচার হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছিলেন। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি খুলে দেওয়ার জন্য এবং উত্তরাধিকারী হিসেবে বাড়ির মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আবেদন করলেও জিয়াউর রহমান সরকার তাতে সাড়া দেয়নি বলে শেখ হাসিনা তার স্মৃতিচারণমূলক ‘স্মৃতি বড়ো মধুর, স্মৃতি বড়ো বেদনার’ কলামে উল্লেখ করেছেন। তবে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রপতি সাত্তার ১৯৮১ সালের ২১ জুন ঐ বাড়িটি বুঝিয়ে দেন বলে শেখ হাসিনা তার লেখায় উল্লেখ করেন।
আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে বেশ কয়েক বার হামলার শিকার হন শেখ হাসিনা। তাকে অন্তত ২৪ বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি সবচেয়ে নৃশংস হামলার শিকার হন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ঐ সময় নেতাকর্মীদের তৈরি মানববর্মে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এদিন প্রাণ হারান ২৪ জন নেতাকর্মী।
১৯৮১ সালের ১৭ মে সব হারিয়ে দেশে ফিরে দেশের মানুষকে যে কথা দিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেই কথা রেখেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, রায়ও কার্যকর হয়েছে। টানা তৃতীয় বারসহ চতুর্থ বার প্রধানমন্ত্রীর আসনে থেকে ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করে দেশকে সারা বিশ্বের সামনে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়, উন্নয়নের রোল মডেল। একের পর এক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে এরই মধ্যে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও স্বীকার করেছেন, সরকারের যা কিছু সাফল্য এর সবই অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে।
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৪২ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ বেলা ১১টায় গণভবনে গিয়ে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল শেখ হাসিনার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বেলা সাড়ে ৩টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ বক্তব্য রাখবেন। সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু, সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনায় বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালন করবে।
জেকেএস/