• ঢাকা শুক্রবার
    ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচনে সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

প্রকাশিত: মে ১৭, ২০২৩, ০২:৫৩ এএম

জাতীয় নির্বাচনে সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো দলের দিকে না তাকিয়ে ওই সময়কার সরকার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, নির্বাচনে আমাদের দায়িত্ব কোনো দলের দিকে তাকানো নয়, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই চেষ্টাটাই আমরা মূলত করব। পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করার চেষ্টা করব।

মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে বৈঠক শেষ সিইসি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

বাসাইল পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা ও মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর সিইসি ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে ঈঙ্গিত করে সিইসি বলেন, আপনারা (রাজনৈতিক দল) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর করে তুলুন। আমাদের যে দায়িত্ব থাকবে, কোনো দলের দিকে তাকানো নয়, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই চেষ্টা করা। রাজনৈতিক সরকার ও আমলাতান্ত্রিক সরকারের ওপর আমাদের যে নিয়ন্ত্রণ আইনে দেওয়া হয়েছে, আমরা সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।

রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক সরকারের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক সরকার বলতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব থেকে সহকারী সচিব পর্যন্ত এবং রাজনৈতিক সরকার বলতে উপমন্ত্রী থেকে ওপর পর্যন্ত। দুটো মিলেই কিন্তু পরিপূর্ণ সরকার।

বৈঠকের আলোচনার বিষয় তুলে ধরে সিইসি বলেন, আমরা আশ্বাস দিয়েছি, আমাদের দায়িত্ব ও সাধ্য অনুযায়ী যতকুটু সম্ভব তা পালন করার চেষ্টা করব। আবার এটাও বলেছি যে, নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাচন আয়োজনের একটা বড় দায়িত্ব আছে, একই সঙ্গে আপনারাও যারা রাজনীতিতে আছেন, তাদেরও দায়িত্ব আছে সার্বিকভাবে নির্বাচনের জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেওয়া। খুব প্রতিকূল পরিবেশ যদি বিরাজ করে তাহলে আমাদের জন্য কাজ করা অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়তে পারে।

নির্বাচনকালীন সরকার প্রসঙ্গে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, উনি (কাদের সিদ্দিকী) বলেছেন যে নির্বাচনের সময় সরকার হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। আমরা এটা বুঝি। কিন্তু তার পরেও গ্রাউন্ড রিয়েলিটিটাকে মাথায় রেখে আমরা বলেছি, সেই ক্ষেত্রেও আমরা চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব দক্ষতা, সততা ও সাহসিতকার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করব। তিনি বলেছেন যদি আসন্ন বাসাইল পৌরসভা নির্বাচনটা সুষ্ঠু হয়, তাহলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উনারা অংশগ্রহণ করবেন। আমরা বারবার বলেছি যে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। উনি (কাদের সিদ্দিকী) বলেছেন যে, নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয়, আমাদের (ইসির) করার কিছু থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে আমাদের সবাইকে সহায়তা করতে হবে, সরকারের সদিচ্ছার কথা বলেছি। বঙ্গবীর আমাদের বলেছেন যে আমরা কিছুটা দুর্বল কিনা? আমরা বলেছি ‘না’। সরকারে সদিচ্ছা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রাজনৈতিক সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে কিন্তু অনেকটা। দীর্ঘদিনের যে আমলাতান্ত্রিক সরকার অর্থাৎ ডিসি, এসপি, বিডিআর...। আমরা বারবার একটা অভিযোগ শুনেছি যে পুলিশের নেতিবাচক একটা ভূমিকা থাকে। এটা পুলিশের জন্য নয়, স্থানীয়ভাবেই হয়তো পুলিশকে পক্ষাশ্রীত করার চেষ্টা হয়ে থাকে প্রার্থীদের পক্ষ থেকে। পুলিশের হাতে অস্ত্র থাকে, শক্তি থাকে, ইউনিফরম থাকে, সেই দিকটাও আমরা দেখব। আমি পুলিশকে দোষারোপ করছি না। আমিই পুলিশের কাছে যাচ্ছি কনভিন্স করার জন্য, পুলিশ আমার কাছে আসছে না- এই বিষয়টাই কিন্তু আমাদের সবার নিউট্রলাইজ করতে হবে।

দীর্ঘদিনের সাজানো প্রশাসনিক ব্যবস্থা কি ভাঙ্গা যাবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা যে নির্বাচনগুলো করেছি, সেগুলো মোটামুটি তুলনামূলকভাবে সুশৃঙ্খলভাবে হয়েছে। আমি বলব না যে অ্যাবস্যুলিটলি হয়েছে। সেক্ষেত্রে কিন্তু আমরা সরকার, পুলিশ এবং প্রশাসনের আন্তরিক সহযোগিতা পেয়েছি। কখনো অসহযোগিতা পাইনি। আশা করি, জাতীয় নির্বাচনেও তারা এই ভূমিকার পালন করে যাবেন।

প্রশাসন নিরপেক্ষ রাখতে ইসি কী পদক্ষেপ নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, সেটা আমরা নিজেরা (নির্বাচন কমিশন) চিন্তা করব। আপনাদের কাছে বলতে চাচ্ছি না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারের সদিচ্ছ ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না একথা আমরা বলিনি। সরকারের সদিচ্ছা এবং সহযোগিতা না থাকে এবং তার যে অঙ্গ সংগঠনগুলো যেমন পুলিশ, প্রশাসন সহায়তা না করে, তাহলে আমাদের যে সক্ষমতা আছে তা সীমিত হয়ে পড়বে। বিশেষ করে পুলিশ, আর্মি, বিডিআর, ওরা যদি আমাদের নিরপেক্ষভাবে সহায়তা করে, কোনো রকম যদি অন্য কোনো পক্ষ থেকে যদি প্রভাবিত না হয়, তাহলে আমার শক্তিটা অনেক বেড়ে যাবে। সেখানে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

 

জেকেএস/

আর্কাইভ