• ঢাকা রবিবার
    ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নিরাপত্তায় ৮৫০ পুলিশ

প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৩, ০২:৩৪ এএম

বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নিরাপত্তায় ৮৫০ পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

ইমরান আলী, ঢাকা

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের নিরাপত্তায় যোগ হচ্ছে ৮৫০ জন পুলিশ। চলতি বছরের অক্টোবরে উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে থার্ড টার্মিনালের। এজন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ চলমান রয়েছে। আর উদ্বোধনের  আগেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য যোগ হবে। বর্তমানে বিমানবন্দরে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ১১৮০ সদস্য রয়েছে। নতুন করে ৮৫০ সদস্য যোগ হলে এর সংখ্যা দাঁড়াবে ২০৩০ জনে।


বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, আমরা থার্ড টার্মিনালের জন্য নতুন ৮৫০ জন পুলিশের চাহিদাপত্র পুলিশ সদরদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। উদ্বোধনের আগেই তারা যোগ দেবে বলে আমরা আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রকৃত পক্ষে থার্ড টার্মিনালের জন্য পুরো একটি ব্যাটালিয়নের চাহিদা দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নতুন চাহিদাপত্রে অতিরিক্ত ডিআইজি ১ জন, পুলিশ সুপার ৩ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৪ জন, এএসপি ৬ জন, মিডিয়া অফিসার ১ জন, পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ৪ জন, পরিদর্শক (নিরস্ত্র) নারী ৩ জন, পরিদর্শক (সশস্ত্র) ১৮ জন, এসআই (নিরস্ত্র) ৯ জন, এসআই (সশস্ত্র) ৩১ জন, সার্জেন্ট ৩ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) ১০ জন, এএসআই (নিরস্ত্র) নারী ৪ জন, এএসআই ৯৬ জন, নায়েক ১৫৩ জন, কনেস্টবল পুরুষ ও নারী ৪৬৫ জন, কুক (কনেস্টবল) ২৪ জন, এনএসই (কনেস্টবল) ১৪ জন, টেইলর (কনেস্টবল) ১ জন উল্লেখ করা হয়েছে।  

সূত্রে জানা যায়, দেশের বিমানবন্দরের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ প্রকল্প হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত তৃতীয় প্রকল্প, যা থার্ড টার্মিনাল হিসেবেই সমধিক পরিচিত। বর্তমানে প্রধান বিমানবন্দর শাহজালালে বর্তমানে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। এই দুটি টার্মিনাল এক লাখ বর্গমিটার জায়গার ওপর। আর থার্ড টার্মিনালে রয়েছে দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এলাকা। বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত এই বিমাবন্দরের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন। এটির কাজ আগামী বছরে শেষ হওয়ার শিডিউল থাকলেও চলতি বছরের অক্টোবরেই প্রাথমিক পর্ব শেষে উদ্বোধনের লক্ষ্যে তোড়জোড় চলছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে এখানে। এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিটা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থার্ড টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ করছে।

ইতিমধ্যে থার্ড টার্মিনালের ৭২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখানে থাকছে ৩৭টি অ্যাপ্রোন পার্কিং। অর্থাৎ একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে চারটি ট্যাক্সিওয়ে আছে। নতুন করে আরও দুটি হাই স্পিড ট্যাক্সিওয়ে যোগ হচ্ছে। রানওয়েতে উড়োজাহাজকে যাতে বেশি সময় থাকতে না হয়, সে জন্য নতুন দুটি ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য দুটি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আরো থাকবে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তিনতলা ভবন। এখানে থাকবে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ। প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে উড়োজাহাজ রাখার জন্য ৩৬টি পার্কিং বে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেকইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেকইন কাউন্টার থাকবে। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার। আগমনের ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেকইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেকইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টি লেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউল হক পলাশ বলেন, তৃতীয় টার্মিনালের বিশাল এলাকাজুড়ে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের বিষয়টি চিন্তা করেই পুলিশ সদরদপ্তরে এ চাহিদা প্রেরণ করা হয়েছে।

এপিবিএন সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ১৩ এপ্রিল জাতীয় গোয়েন্দা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে বিমানবন্দরে মোতায়েনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রির নির্দেশের পর প্রায় দুই মাস পরই অর্থাৎ ১ জুন বিমানবন্দরে কার্যক্রম শুরু করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। আর্মড পুলিশের ৮ নং ব্যাটালিয়নের ৭ শতাধিক সদস্য ও বাকি বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের প্রায় ৫ শত সদস্য নিয়ে বর্তমানে সদস্যা সংখ্যা ১১৮০ জন। ব্যাটালিয়নের প্রধান অর্থাৎ কমান্ডিং অফিসার পূর্বে একজন পুলিশ সুপার থাকলেও বর্তমানে একজন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি)। এছাড়াও পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছাড়াও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ বিসিএস কর্মকর্তা রয়েছে ১২ জন।

জানা যায়, ৪ শিফটে প্রতিটিতে প্রায় আড়াই শতাধিক সদস্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শিফট ইনচার্জ হিসেবে ডিউটি অফিসারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এই সময়ের মধ্যে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্পর্শকাতর সকল স্থানে সিসি ক্যামেরা লাগানো সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি ডগ স্কোয়াড কে-নাইন, ক্রাইসিস রেসপঞ্জ টিম (সিআরটি)ও গঠন করেছে। মাঝে মধ্যে তাদের বিমানবন্দরে মহড়া চালাতেও দেখা যায়।

বিমানবন্দরের দুটো টার্মিনাল, টার্মিনালের অভ্যন্তরীন, বাহির, রানওয়ে, আমদানী, রপ্তানী কার্গোসহ পুরো এলাকায় নিরাপত্তায় কাজ করছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চোরাচালান প্রতিরোধসহ বিমানবন্দরের বাইরে প্রবাসীদের হয়রানীমুলক কর্মকান্ড প্রতিরোধে ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন।

জাতীয় সম্পর্কিত আরও

আর্কাইভ