প্রকাশিত: মে ১৩, ২০২৩, ০৬:৫৮ পিএম
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে কক্সবাজার উপকূলে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শনিবার (১৩ মে) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান এ কথা জানান।
তিনি বলেন, গত (শুক্রবার) রাত থেকেই কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় বিপদাপন্ন জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বিপদের সম্মুখীন সেন্টমার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত মানুষের নিরাপত্তায় গতকালই সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেখানে অবস্থানরত আনুমাণিক ৮৫০০ মানুষকে সর্বোচ্চ জলোচ্ছ্বাস মাত্রার উপরে সুপার সাইক্লোন মোকাবিলায় সক্ষম ৩৭টি অবকাঠামোয় নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আগেভাগেই সেখানকার সকল মজবুত-নিরাপদ অবকাঠামোর হোটেল-রিসোর্ট, সকল সরকারি বেসরকারি উপযুক্ত অবকাঠামো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। এরপরও প্রয়োজনীয়তা সাপেক্ষে সেখানকার মানুষকে উদ্ধার করে টেকনাফে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। কক্সবাজার ও মিয়ানমার জেলায় আঘাত হানবে মোখা। সেন্টমার্টিন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের সবশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
মোখা শনিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে রোববার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮ থেকে ১২ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে এবং অতি ভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করে বিভিন্ন দেশ। যেমন এর আগে উপকূলে আঘাত হানা ‘সিত্রাং’ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ করেছিল থাইল্যান্ড। তেমনই ‘মোখা’ নামটি দিয়েছে ইয়েমেন।
যদিও ‘মোখা’ শব্দের আক্ষরিক কোনো অর্থ নেই। ইয়েমেনের বন্দর শহর ‘মোখা’র নামে ঘূর্ণিঝড়ের এ নামকরণ করা হয়েছে।
১৯ শতক পর্যন্ত মোখা ছিল ইয়েমেনের রাজধানী সানার প্রধান বন্দর। এ শহর থেকেই সারা বিশ্বে বিখ্যাত কফি ‘মোখা’ রফতানি করা হতো। কফির নামকরণও হয়েছে শহরের নামেই।
জেকেএস/